ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। বাকি আসনগুলোর কিছু শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে জটিলতা থাকায় তা স্থগিত রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা-১৬ (রূপনগর–পল্লবী) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সাফজয়ী সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক।
একসময় জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের গর্ব ছিলেন আমিনুল হক। গোলবারের নিচে তার প্রতিটি ডাইভ ছিল যেন একেকটি প্রার্থনা- বাংলাদেশের জয়। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে তার অসাধারণ গোলরক্ষার কল্যাণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তিনি শুধু একজন ফুটবলার নন, ছিলেন গোটা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। পরবর্তীতে তার অধিনায়কত্বে এসএ গেমসেও স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ।
ক্লাব ফুটবলেও তার পদচিহ্ন বিস্তৃত। আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল- যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই রেখে গেছেন অনন্য ছাপ। গোলকিপার হিসেবে তার ক্ষিপ্রতা, ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আর নেতৃত্বগুণ তাকে পরিণত করেছিল কিংবদন্তিতে।
ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৩ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হন আমিনুল হক। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ফুটবলের চেয়ে রাজনীতির মাঠ অনেক কঠিন।’ কথাটি বলেছিলেন অভিজ্ঞতার গভীরতা থেকেই। কারণ মাঠে প্রতিপক্ষ এগারোজন, কিন্তু রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ অগণিত। তবুও পিছু হটেননি তিনি। মাঠে যেমন দলকে জেতাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, রাজনীতিতেও ঠিক তেমনই সংগঠনের ভরসা হয়ে উঠেছেন।
প্রথমে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দলের নেতৃত্বে যুক্ত হন। এরপর দায়িত্ব নেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব হিসেবে। পরে মহানগর বিএনপির গুরুদায়িত্ব পান, হয়ে যান মহানগর উত্তরের আহবায়ক। যেখানে তিনি কেবল নেতৃত্বই দিচ্ছেন না, কর্মীদের মাঝে হয়ে উঠেছেন প্রেরণার প্রতীক।
আন্দোলন-মিছিল, মামলা-হামলা আর গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে তার পথচলা। একাধিকবার কারাভোগ করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এসেছেন আরও দৃঢ় হয়ে, আরও বেশি জনসংযোগ ও সহানুভূতির বার্তা নিয়ে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া; বগুড়া-৬ আসনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান; ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১, আব্দুল মঈন খান নরসিংদী-২, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০, সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজার-১, মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা-৩, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ-২, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা-৩, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন দিনাজপুর-৬ আসনে লড়বেন।
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নোয়াখালী-৩ আসনে বরকত উল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান, ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও টাঙ্গাইল-৮ আসনে আহমেদ আজম খান মনোনয়ন পেয়েছেন।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী, ঢাকা-২ আসনে আমান উল্লাহ আমান, নোয়াখালী-১ আসনে মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৪ আসনে জয়নুল আবদিন ফারুক, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবুর রহমান সারোয়ার, নেত্রকোনা-৪ আসনে লুৎফুজ্জামান বাবর, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাজভীর উল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মঈনুল ইসলাম খান, সিলেট-১ আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রশদীর লুনা, লক্ষীপুর-২ আসনে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিলেট-৬ আসনে এনামুল হক চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আসনে আবদুস সালাম পিন্টু, ফেনী-২ আসনে জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান এবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
আমিনুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে আমার এলাকা পল্লবী-রূপনগরের সর্বস্তরের ভোটার এবং জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। আমি নির্বাচিত হলে এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য যা যা করা দরকার করবো ইনশাআল্লাহ। সুখে-দুখে তাদের পাশে থাকতে চাই। সবাইকে আমার জন্য দোয়া করবেন।