Tuesday 04 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বগুড়ায় আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক-ব্যবস্যায়ী ও হিমাগার মালিকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:০৩ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩১

হিমাগারে আলুর পরিচর্যা করছেন শ্রমিকরা। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: বগুড়ায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের কারণে বাজারে চাহিদা ও দাম কমে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা। অন্যান্য বছর লাভবান হলেও এবার আলু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কৃষকদের লোকসান পোষাতে সরকার হিমাগার গেটে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও, সে দামে ক্রেতা না থাকায় কেউই উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক উভয় পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হিমাগারে থাকা আলু বিক্রি হচ্ছে না এবং অনেক কৃষকের ঘরেও আলু নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে লাখ টনের বেশি আলু এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গেলো মৌসুমে বগুড়ায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৩ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। যা জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৭ লাখ টন বেশি। বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে পাশাপাশি কৃষকের ঘরে সংরক্ষণ করেন। যেখানে ৪২টি হিমাগারে প্রায় ৩ লাখ ৯৪টন আলু সংরক্ষন আছে। তবে আবহাওয়ার কারণে কৃষকের ঘরে অনেক আলু পচে নষ্ট হচ্ছে।

জানা যায়, গেল বছর আলুর দাম ভালো থাকায় এবার আলু উৎপাদন ভালো হয়েছিলো উত্তরের জেলা বগুড়াতে। কিন্তু আলু চাষীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরল উলটো দিকে। লাভের চেয়ে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক, ব্যবস্যায়ী ও হিমাগার মালিকরা।

এদিকে হিমাগারে সংরক্ষনের সময় সিমা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হলেও বহু কৃষক এখনও আলু সরবরাহ নেননি। এতে লাখ টনের বেশি আলু এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে হিমাগার মালিকদের জন্য।

কৃষকরা বলছেন, সরকারের বেধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। উৎপাদন বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। দামও নেমেছে তলানিতে। জেলার ৪২টি হিমাগারে এখন উপচে পড়ছে আলুর বস্তা। আলুর দাম কমে যাওয়ায় হিমাগারে আলু বিক্রি করতে পারছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ায় লোকশানে পরেছেন তারা।

তারা বলেন, গত মৌসুমে আশায় বুক বেধে উন্নতজাতের আলু ডায়মন্ড, স্টিক, ও কার্ডিলাল আলু চাষ করেছিলেন বগুড়ার কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় মৌসুম শেষে মার্চ মাসে আলু হিমাগারে সংরক্ষন করেন তারা। কিন্তু সংরক্ষনের সাত মাস পরেও বাজারে আলুর দাম না বাড়ায় বিপাকে পড়েন। সরকার নির্ধারিত ২২ টাকা কেজি দরের পরিবর্তে হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৬ টাকা দরে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দাম না পাওয়ায় অনেকেই এখনও হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।

বগুড়া সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল এলাকার কৃষক আমিনুর প্রামানিক জানান, কেজিপ্রতি আলুতে খরচ হয়েছে ২১ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকায়। এমন ক্ষতির মুখে আগামী মৌসুমে তারা আলু চাষ করা নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর দাম অনেক কম। স্টোর ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আলুতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। আলুর বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আলু মজুত করার পাশাপাশি, সনাতন পদ্ধতিতে কৃষকের বাড়িতে আলু সংরক্ষণের পরামর্শ ব্যবসায়ী নেতাদের।
গত বছর এ সময়ে ভোক্তাদের আলু কিনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। আলুর দর বেশি পাওয়ায় গত বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু বেশি উৎপাদিত হয় বগুড়া জেলায়।

বগুড়া আরবি কোল্ড স্টোরেজ এর স্বত্বাধিকারী পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, আলুর দাম নিম্মমুখী হওয়ায় কৃষক, ব্যবসায়ী একং হিমাগার মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। চাহিদা কম থাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে এসব আলু। প্রতিটি হিমাগারে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ আলু এখানো সংরক্ষন রয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষনের সময় সিমা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে বৃষ্টির কারণে হয়তো আলুর চাষাবাদ পিছিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আলু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাবাংলা/জিজি
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর