ঢাকা: চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫) বাজেট বাস্তবায়ন হার বেড়েছে। এ সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ১২ শতাংশ।
অতি সম্প্রতি চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়নের হিসাব সম্পন্ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, এর বিপরীতে প্রথম প্রান্তিকে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ-এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৯ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। এটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১৮ শতাংশ। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআর)-এর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। সে হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এবার রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
এদিকে মূল বাজেটে মোট সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রথম প্রান্তিকে বাজেট ঘাটতি ১২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে মোট ৪ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা (নিট লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা) ঋণ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যদিকে একই সময়ে ২ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। সে হিসাবে নিট ঋণ নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক-বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে প্রথম প্রান্তিকে ৯৮৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর অন্যান্য খাতে ১০ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ১৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণ ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়া প্রথম প্রান্তিকে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৫৭ হাজার ৮২৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৩১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ২৫ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
বাজেট উপাত্তে দেখা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের দেশি-বিদেশি নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক। এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পাশাপাশি ২৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল। অন্যদিকে বৈদেশিক উৎস থেকে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাক ঋণ গ্রহণ এবং ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল। তবে দেশি-বিদেশি উভয় উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ ঋণাত্মক হলেও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ মোট ৪১ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৩৮ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ৩ হাজার ১৩৬ কোটি টাক পরিশোধ করা হয়।
অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, অন্যান্যের মধ্যে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়েও বাজেট বাস্তবায়ন হার ৪ শতাংশ ছিল। প্রথম প্রান্তিকে চলতি অর্থবছরে এডিপি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে এডিপি ব্যয় গত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে।