ঢাকা: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। যা আদালতের নির্দেশনা, রাষ্ট্র ও সরকারের নীতির পরিপন্থী। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে ফিলিপ মরিসের নিকোটিন উৎপাদনের কারখানা অনুমোদন বাতিল করা দরকার বলে জানিয়েছে পাবলিক হেলথ লয়ারস নেটওয়ার্ক।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে পাবলিক হেলথ লয়ারস নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এই নীতিমালার মধ্যে রয়েছে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সংশোধন। আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে শুধুমাত্র নিকোটিন তামাকপাতা বা নির্জাষ হতে তৈরি দ্রব্য। তবে এখন অনেক নিকোটিন ক্যামিকেল থেকে তৈরি হয়। যা বিদ্যমান আইনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে অনেক তামাক কোম্পানি এই আইনের ফাঁকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টায় আছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ এক রায়ে বাংলাদেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে ৬টি নির্দেশনা দিয়েছে। ওই রায়ের নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম- দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের নতুন কোনো কোম্পানি অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রদান না করা এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলো তামাকজাত পণ্য উৎপাদন বন্ধে অন্য শিল্পে পরিবর্তন হওয়ার নির্দেশনা। সংবিধানের জনস্বাস্থ্যকর ভেষজ নিষিদ্ধকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিকোটিন পাউচের মতো ক্ষতিকর পণ্য, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পণ্যটিকে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে অনুমোদন দেয়নি, সেখানে তা অনুমোদনের মাধ্যমে বেজা আদালতের নির্দেশনা ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সরকারের উচিত এ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। অন্যথায় আইন, আদালত ও বিচারব্যবস্থার সম্মানহানী হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১৮ মে দেশে ই-সিগারেট জাতীয় যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনের কোনো কারখানার স্থাপনের অনুমতি না দিতে বিডা ও বেজাকে নির্দেশনা দেয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ৩৫ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা দেশের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করার যৌথ ঘোষণায় সই করেছে। সরকার বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবে এ ধরনের নিকোটিন পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে। অপর দিকে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিকোটিন রিপ্রেসমেন্ট থেপারির জন্য ওষুধ অনুমোদন করেছে। এমতাবস্থায় বেজার ফিলিপ মরিসকে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে ফিলিপ মরিসের নিকোটিন উৎপাদনের কারখানা অনুমোদন বাতিল করা দরকার।
জনস্বাস্থ্যে রক্ষার্থে সচেষ্ট আইনজীবীরা গভীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে বিবৃতিতে আরও বলেছেন, তারা লক্ষ করছেন যে দেশে বিদ্যমান ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন ও অন্যান্য আইনের প্রতিপালনের সীমাবদ্ধতার কারণে তামাকজাত পণ্যের প্রচুর বিজ্ঞাপন হচ্ছে, ই-সিগারেট মতো ক্ষতিকর পণ্যের প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করছে কতিপয় স্বার্থগোষ্ঠী, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আপিল বিভাগের নির্দেশনার পরিপন্থী। ফলে ধূমপানের ক্ষতি থেকে তরুণদের বিরত রাখতে এবং অধূমপায়ী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের রক্ষায় সরকার আইন সংশোধনের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই তারা প্রত্যাশা করছেন।