Tuesday 04 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মনোনয়নেই ‘বিজয়ের আনন্দ’
চট্টগ্রামে প্রার্থীদের ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের উৎসব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৩১ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ২২:৫৫

চট্টগ্রামে প্রার্থীদের ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের উৎসব। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রামে দিনভর রীতিমতো উৎসবে মেতেছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কয়েকজন প্রার্থী ঢাকা থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন। প্রার্থীদের বাসা-বাড়িতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। হাসিমুখে করমর্দন-আলিঙ্গন, মিছিল-স্লোগানে মুখর ছিল প্রার্থীদের বাসভবন।

কবর জিয়ারত, কর্মীসভাসহ নানা কর্মসূচিতে প্রার্থীদের কেউ কেউ রীতিমতো শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচনি প্রচার। তবে কোনো কোনো আসনে প্রার্থীদের নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও আছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের ২৩৭টি আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের ১০ প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই নতুন মুখ। এরা হলেন- চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে যুবদল নেতা কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

পুরনো মুখের মধ্যে আছেন- চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।

প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাঠে নামা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজারো নেতাকর্মী তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন। এরপর তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় যান। সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের প্রথম কবর জিয়ারত করেন। পরে রাঙ্গুনিয়ার কাদেরনগরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় হুম্মামের মা ফারহাত কাদের চৌধুরী তার সঙ্গে ছিলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার মানুষ দীর্ঘসময় আমার পরিবারের পাশে থেকে যে ধৈর্য দেখিয়েছে, আশা করি সামনের দিনেও সেভাবে ধৈর্য দেখাবে। আমাদের সকলের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল যে, আমাদের দলের প্রধান যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আমাদের দলের পক্ষে যাবে। তবে আমি বলেছিলাম, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে থাকুক বা বিপক্ষে থাকুক, আমি মাথা পেতে নেব। আমার বাবা আমাকে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। রাঙ্গুনিয়াবাসী এবং দলের সকল নেতাকর্মী সবসময় আমার বাবার পাশে ছিলেন। আশা করি, আমিও সবাইকে আমার পাশে পাব।’

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে এরশাদ উল্লাহ দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথমবার মনোনয়ন পেলেও দলের একাংশের বিরোধিতার মুখে হেরে যান। এবার ফের মনোনয়ন পাওয়া এরশাদ উল্লাহর চট্টগ্রাম নগরীর বাসভবনে আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় লেগেছিল। এসময় এরশাদ উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা নেতাকর্মীদের হাতে ধানের শীষের লিফলেট তুলে দেন।

এরশাদ উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালেও একবার চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছিলাম। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আবার আমার ওপর আস্থা রেখে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। ইনশল্লাহ আমি সবার সহযোগিতায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হলে জনগণের সেবার রাজনীতি, উন্নয়ন-উৎপাদনের রাজনীতি থেকে পিছিয়ে যাব না। আমার নির্বাচনি এলাকা বোয়ালখালীর একটা বড় দুঃখ হচ্ছে কালুরঘাট। আমি বিজয়ী হলে এই সেতুর কাজটা যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, সেই চেষ্টা করব। বোয়ালখালীতে একটা স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের আছে। এখন যে ৫০ শয্যার হাসপাতাল সেখানে আছে, সেটাকে ২৫০ শয্যার করার পরিকল্পনাও আমাদের আছে।’

আনোয়ারা আসনে মনোনয়ন পাওয়া সরওয়ার জামাল নিজাম আগেও দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এবং ২০১৮ সালেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামাল। এবার আবারও মনোনয়ন পেয়ে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বরণের পর নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে তাকে আনোয়ারার তৈলারদ্বীপে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সরওয়ার জামালের বাসভবনসহ পুরো এলাকা স্লোগানে-স্লোগানে মুখর করে তোলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ সময় সরওয়ার জামাল নিজাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মনোনয়নের পর বিএনপির প্রবীণ নেতা যারা আছেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার পাশে এসেছেন। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সবাই মিলেমিলে ধানের শীষকে বিজয়ী করে আনোয়ারা আসন আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে তুলে দেব।’

এদিকে বুধবার (৫ নভেম্বর) নির্বাচনের মাঠে নামছেন প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া তরুণ বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের ছেলে মীর হেলাল বর্তমানে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, বুধবার মীর হেলাল বাদ জোহর নগরের লালদীঘির পাড়ে প্রখ্যাত সুফীসাধক আমানত শাহ’র মাজার জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে হাটহাজারী উপজেলার মীরেরহাটের মীর বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদী এবং মুরব্বিদের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর হেফাজত ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফী ও সাবেক মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ওয়াহিদুল আলমের কবর জিয়ারত করবেন।

চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আগামীকাল (বুধবার) চট্টগ্রামে আসছেন। এদিন বিকেলে তিনি দলীয় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

এদিকে চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে প্রায় আট বছর জেল খেটে বের হওয়া আসলামকে মনোনয়ন না দেওয়ার ঘটনায় সীতাকুণ্ডের লোকজনও বিস্মিত হয়েছেন। তার অনুসারীরা সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী, সলিমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাত নয়টার দিকে ভাটিয়ারী রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের ওপর কাঠের স্লিপার তুলে আগুন ধরিয়ে দেন। ফলে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে আসলাম চৌধুরীর নির্দেশে তারা সড়ক ছেড়ে যান।

সীতাকুণ্ডে মনোনয়ন পাওয়া কাজী সালাহউদ্দিনকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না আসলামের অনুসারীরা। সেখানে স্থানীয় বিএনপির বড় অংশই আসলামের নিয়ন্ত্রণে। মঙ্গলবার বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এক প্রতিবাদ সভায় সালাহউদ্দিনকে প্রত্যাখান করে আসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর