Wednesday 05 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বহিষ্কার হয়েও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন যারা

মো. মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৪ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:১৪

রুহুল আমিন দুলাল, ফখর উদ্দিন বাচ্চু, মোকাররম হোসেন সুজন, মো. আলী সরকার ও নুরুল আমিন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: গত বছর পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগে ১৪ মাসে বিএনপি থেকে প্রায় সাত হাজারের অধিক দলীয় নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজনকে আবার দলে ফিরিয়ে এনে ধানের শীষ প্রতিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সই করা এক চিঠিতে বিএনপির সাতজন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাতার করা হয়। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১ আসন (মিরশরাই) নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন বাচ্চুকে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বান রুহুল আমিন দুলালকে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল বিএনপি।

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের আংশিক) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় মোকাররম হোসেন সুজনকে। বিগত পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৪ সালে দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর তারও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

একই দিন ২৪ অক্টোর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় রংপুর-২ (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় মো. আলী সরকারকে। তিনি ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন।

এর আগে, ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাতক্ষীরা জেলার আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি আবদুর রউফকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছিল।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কৃত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফ এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসন (সদর-দেবহাটা) থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জানা গেছে, আবদুর রউফের বহিষ্কারাদেশ এখনও বহাল আছে।

গত ২৩ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদরের আলিপুর চেকপোস্ট মাদরাসা ও মসজিদ আয়োজিত এক মাহফিলে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও শিল্পী কবির বিন সামাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আলোচনায় আসেন আলিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। সেই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা মানববন্ধন করেন। বক্তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আব্দুর রউফকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

পরের দিন ২৪ এপ্রিল রাতে এক বিবৃতিতে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি জানায়, আব্দুর রউফ বিএনপির দলীয় নেতা বা কর্মী নন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আব্দুর রউফকে বিএনপির সঙ্গে জড়িয়ে সব মিডিয়ায় প্রচার না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী সরকারের সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এ কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে বহিষ্কার করেছে। বিবৃতিতে সই করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ ও সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু।

এদিকে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ৩ নভেম্বর ঘোষিত তালিকায় খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক এই সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা-২ (সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসন থেকে বিএনপির পদ অব্যাহত থাকা নেতা ফজলুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। গত ২৬ আগস্ট বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পাওয়া নোটিসের জবাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা সন্তোষজনক না হওয়ায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে বিএনপি। তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার আগেই তিনি দলীয় প্রতিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য মনোনয়ন পেলেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ইতোমধ্যে সাত হাজারের বেশি দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের দায়ে কেউ পদচ্যুত হয়েছেন; আবার অনেকেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। বহুমুখী অপপ্রচারের মাঝেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এগুলো ছিল অপরিহার্য। শৃঙ্খলা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটিই আমাদের শক্তি।

তিনি বলেন, নিজেদের সদস্যদের দায়বদ্ধ করার মাধ্যমেই আবারও প্রমাণ হলো যে, বিএনপি সততার ব্যাপারে আন্তরিক এবং আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছে যেসব মানদণ্ড দাবি করি, নিজেদেরও ঠিক সেই একই মানদণ্ডে দাঁড় করাই। এইভাবেই আমরা জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করতে চাই— বিশেষত তরুণদের, যারা রাজনীতিকে কেবলমাত্র ক্ষমতার খেলা হিসেবে দেখতে চায় না; বরং দেখতে চায় সবার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি মহৎ ক্ষেত্র হিসেবে।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন যারা দলের জন্য কাজ করেছেন। ছোটখাটো অভিযোগে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা দল ছেড়ে যায়নি। দলের হয়েই কাজ করেছেন। এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে। বিগত দিনে দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এমন কয়েকজনকে নিয়ে দল বিবেচনা করেছে।

সারাবাংলা/এমএমএইচ/ইআ
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর