Wednesday 05 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৫০ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৫৫

গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচনি প্রচার চালাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। সেইসঙ্গে সরওয়ার বাবলা নামে আরেক বিএনপিকর্মীও গুলিবিদ্ধ হয়ে হয়েছেন।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার হাজীপাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ এবং দলটির কর্মী সরওয়ারকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরশাদ উল্লাহ সাহেব নির্বাচনি প্রচারে গিয়েছিলেন। সেখানে উনার ওপর হামলা হয়েছে। উনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন। উনি ঝুঁকিমুক্ত আছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরীর তিন নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে নির্বাচনি সভা করেছেন এরশাদ উল্লাহ ভাই। সভা শেষ করে তিনি সেখানে একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তিনি হেঁটে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে গুলি করে।’

এদিকে এরশাদ উল্লাহ’র ওপর হামলার প্রতিবাদে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন পাবার পর বুধবার থেকে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন এরশাদ উল্লাহ ভাই। তিনি দোকানে-দোকানে লিফলেট বিলি করছিলেন। সেখানে অতর্কিতে উনাকে গুলি করে আহত করা হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত আছেন। যারা নির্বাচন হতে দিতে চায় না, যে কোনোভাবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারাই এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেছে বলে আমাদের ধারণা।’

পুলিশ এবং বিএনপি ও যুবদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি কর্মী সরোয়ার হোসেন বাবলার ওপর হামলা করতে গিয়ে তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের গ্রুপ এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তাদের ধারণা। সরোয়ার হোসেন বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের বিরোধে চট্টগ্রাম নগরীতে ইতোমধ্যে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি, পাঁচলাইশ, চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক বছর ধরে উভয় গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এর মধ্যে গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা থেকে পুলিশ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। ছোট সাজ্জাদ তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সরওয়ার ও তার অনুসারীদের সন্দেহ করেছিলেন।

এরপর ঈদুল ফিতরের আগেরদিন গত ২৯ মার্চ গভীর রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে চলন্ত প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে একাধিক মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা। ধাওয়ার মুখে কারটি বাকলিয়া এক্সেস রোড দিয়ে এসে চন্দনপুরায় প্রবেশমুখে থেমে যায়। তখন মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীদের মুহুর্মুহু গুলিতে দুজন নিহত হন। আহত হন আরও দুজন।

পুলিশ ও আহতদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই প্রাইভেট কারে সরোয়ার হোসেন বাবলা ছিলেন। মূলত তাকে লক্ষ্য করেই ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের সন্ত্রীসারা গুলি ছুঁড়েছিলেন। তবে সেসময় সরোয়ার প্রাণে বেঁচে যান।

এ ঘটনায় কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদকে প্রধান আসামি করে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ সাতজনকে আসামি করে বাকলিয়া থানায় মামলা হয়। পরে তামান্নাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।

সূত্রমতে, সরোয়ার হোসেন বাবলা ও ছোট সাজ্জাদ উভয়ই আগে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যে থাকা সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উভয়ই প্রকাশ্যে এসে সক্রিয় হন। তখন তাদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে। সরোয়ার হাসান বাবলা বড় সাজ্জাদের গ্রুপ ছেড়ে উত্তর চট্টগ্রামের একজন বিএনপি নেতার অনুসারী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে থাকেন। সম্প্রতি সরোয়ার বিয়ে করেন। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতারের পর থেকেই সরোয়ারের ওপর প্রতিশোধ নিতে তার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা মরিয়া হয়ে ওঠে। এর মধ্যে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে বালি উত্তোলনের নিয়ন্ত্রণ নেয় সরওয়ারের অনুসারীরা। সেটি আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন ছোট সাজ্জাদ। তাকে গ্রেফতারের সুযোগে সরওয়ার সেটি দখলে নেওয়ায় বিরোধ আরও চাঙ্গা হয়।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ যে ঘটনা ঘটল, অনুমান করছি সেটা সরোয়ার এবং ছোট সাজ্জাদের মধ্যে বিরোধের কারণে হয়েছে। তবে সেটা আরও তদন্ত করে দেখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর