Wednesday 05 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জেতার সম্ভাবনা আছে এমন শরিকদের জন্য আসন ছাড়বে বিএনপি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৫৫ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শরিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, শুধুমাত্র তাদের জন্য বিএনপি আসন ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রথমবার চট্টগ্রামে এসে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর নগরীর মেহেদিবাগে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে আমরা একটি জনসম্পৃক্ত দল। নির্বাচনের জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। আমরা জনগণের ওপর নির্ভর করেই রাজনীতি করি। ১৬ বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে, জীবনহানি হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, জেলে গেছে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছে, তারপরও এই দলটি টিকে আছে শক্তিশালী অবস্থায় এবং আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী। সুতরাং আমরা যেহেতু জনসম্পৃ্ক্ত একটা দল, আমাদের সবসময় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে।’

বিজ্ঞাপন

যেসব আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। বাকিগুলো ক্রমান্বয়ে হতে থাকবে। এটা নির্বাচনের সিলেকশনের একটা প্রক্রিয়া। তারপরও ২৩৭টা আসনে একসাথে প্রার্থী ঘোষণা করা, এটা অনেক বড় পাওয়া বলে আমি মনে করি। এটা এত সহজ কাজ নয়, এর পেছনে বিশাল কর্মযজ্ঞ আছে। আরও কিছু বাকি আছে।’

‘এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের জন্যও আমাদের কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই আলোচনা চলছে। বাকি সিট যেগুলো আছে, সেগুলো অতিসত্বর দেওয়া হবে।’

শরিক দলকে আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাদের সঙ্গে আমরা একসাথে আন্দোলন করেছি। সুতরাং আমরা যেখানে মনে করব, শরিকদের দিলে তাদের জেতার সম্ভাবনা আছে, সেখানে তাদের দিতে হবে। নির্বাচন কিন্তু হারজিতের বিষয়। নির্বাচন করতে হলে হেরে যাবার ঝুঁকি নেওয়া যায় না। সুতরাং জিততে হলে এমন প্রার্থীকে দিতে হবে, সেটা আমাদের দলের হোক কিংবা শরিক দলের হোক, সেই প্রার্থী সেখান থেকে বেরিয়ে আসার মতো, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী হতে হবে।’

বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষের জেরে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আন্দোলন নয়, সবার মতামত দেওয়ার একটা অধিকার আছে। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমাদের দলে বহু ধরনের চিন্তার লোক আছে। আমাদের এটা অ্যালাউ করতে হবে, যতক্ষণ না এটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে না যায়। প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে, দল আবার চিন্তা করবে, কিন্তু সেটা যেন সাংঘর্ষিক না হয়। এটা যেন সহিংসতায় পরিণত না হয়, সহিংসতায় পরিণত হলে দল কিন্তু তার সিদ্ধান্ত নেবে।’

‘বিএনপি সাংঘর্ষিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এ জায়গাটা আমাদের নেতাকর্মীরা অনুধাবন করছে বলেই ২৩৭টা সিটের মধ্যে মাত্র ৪-৫টা সিটে প্রতিবাদ হচ্ছে। এর আগের নির্বাচনে এর চেয়ে অনেক বেশি প্রতিবাদ হয়েছে। বরং এবার কম প্রতিবাদ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতবড় একটা দল, কিছু সিটে সামান্য সমস্যা থাকতে পারে। ৩০০ সিটের মধ্যে ৫-১০ টা সিটে হয়তো বিশেষ কোনো কারণ থাকে, সেখানে স্যাক্রিফাইস করতে হয়। এই স্যাক্রিফাইসটাতেও আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু বিজয় তো ছিনিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন হচ্ছে জয় অথবা পরাজয়, আমাদের তো জয়ের মধ্যে থাকতে হবে। এজন্য আমাদের ছোটখাট স্যাক্রিফাইস করতে হয়, কিন্তু জয়ের জন্য তো এতটুকু করতে হয়।’

বিকেলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আয়োজিত ‘আমার প্রথম ভোট ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

সেমিনারে আমীর খসরু বলেন, ‘শুধু জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ- এই কালচার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন বাংলাদেশে নতুন কালচার তৈরি করতে হবে। সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন। সভার মাঝখানে অমুক উপস্থিত আছেন, তমুক উপস্থিত আছেন- এসব বলার কী খুব দরকার আছে? সম্বোধন করতে গিয়ে বক্তব্যের সময় অর্ধেক আমরা নষ্ট করে ফেলি।’

বিএনপিকে কেন ভোট দেবে– এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কারণ বাংলাদেশে প্রথম বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছে জিয়াউর রহমান, এজন্য বিএনপিকে ভোট দেবেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ১৬ বছর আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন বেগম খালেদা জিয়া। সাত বছর জেলে ছিলেন, কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপস করেনি। বিএনপি বাংলাদেশে শুধু প্রথম গণতন্ত্র চালু করেনি, দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ তৈরি করে দিয়েছেন।’

‘আগে অর্থনীতি ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটে-পকেটে। শেখ মুজিবের আমলে এটা ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে সেটা মানুষের পকেটে নিয়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষ কিন্তু শিল্প-বাণিজ্যে ঢুকতে পেরেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ বিএনপির হাত ধরে এসেছে।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র বলেন, কেয়ারটেকার সরকার বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি বলেন- এদেশে যত সংস্কার হয়েছে সব বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে। সুতরাং গণতন্ত্র চাইলে, সংস্কার চাইলে বিএনপিকেই ভোট দিতে হবে।’

সেমিনারে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরুও বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর