পাবনা: জেলার বনগ্রামে ৩০ গ্রাহকের নামে ৭ কোটি ৮২ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মমিন উদ্দিন বাদী হয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি বনগ্রাম বাজার শাখার ম্যানেজার মো. হেমায়েত করিমকে (৪২) আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন।
হেমায়েত করিম পাবনার ফরিদপুর উপজেলার আমলা পাড়ার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। এর আগে পুলিশ গত ১৯ অক্টোবর হেমায়েত করিমে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
ব্যাংক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে আছেন। গত ১৬ অক্টোবর ব্যাংকটির বনগ্রাম শাখার নতুন ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামান আতাইকুলা থানায় হেমায়েত করিমকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিম দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ৩০ গ্রাহকের পৌনে আট কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। গত ১৫ অক্টোবর বনগ্রামের ব্যবসায়ী সাগরদারী গ্রামের আব্দুস সালাম ব্যাপারী টাকা তুলতে গেলে দেখেন তার হিসাবে কোনো টাকা নেই। এ সময় ব্যাংকের হিসাব রক্ষকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
এক পর্যায়ে আব্দুস সালামের ডাক-চিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ী-গ্রাহকরা ব্যাংকে জড়ো হয় এবং নিজেদের হিসাব নম্বর চেক করে জানতে পারেন প্রায় গ্রাহকেরই জমা রাখা টাকার স্থিতি কম। বিষয়টি ব্যাংকের পাবনার জেলা কার্যালয়কে জানালে তারা এসে ঘটনার সত্যতা পান। এ নিয়ে রাতভর যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশ হেফাজতে দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে মো. ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওইদিনই ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় পূর্বের ব্যবস্থাপক হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে ৩০ গ্রাহকের নামে ৭ কোটি ৮২ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
জেলা দুর্নীতি তম কমিশন পাবনার উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম সরকার মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রথমে আতাইকুলা থানায় অভিযোগ দেওয়া হলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি বিষয়ক হওয়ায় জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়। পরে দুদকের কেন্দ্রীয় অনুমোদন পাওয়ায় বুধবার এই মামলা দায়ের করা হয়।’
সাগরদারি গ্রামের সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘আমি গরুর ব্যবসা করি। ব্যবসার সব টাকা জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখায় রেখেছিলাম। গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখি আমার হিসাব থেকে ৪১ লাখ টাকা নেই। টাকার শোকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
বিভিন্ন গ্রাহকদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লাখ টাকার জমা রশিদ দিলেও ওই টাকা হিসাব নম্বরে জমা হয়নি। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্চুর হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা উধাও হয়ে গেছে।
এছাড়া, বনগ্রামের আব্দুল মতিনের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রাজাপুর গ্রামের হযরত আলীর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বহলবাড়ীয়া গ্রামের আবু জাফরের ৫ লাখ টাকাসহ ৩০ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
বনগ্রাম জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে।’