চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাউজান থেকে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার বিরোধের জেরে এ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) রাতে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- রাউজান উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ সুমন, বাগোয়ান ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল ও ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম চৌধুরী, ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল এবং যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহেল।
আহত পাঁচজনের মধ্যে উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ সুমনের বুকে গুলি লাগায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
আহতরা সবাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী। তারা এই হামলার জন্য দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের দায়ী করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আহতরা সবাই বাগোয়ান ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা কোয়েপাড়া গ্রামে জড়ো হয়ে আলাপ করছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকটি মোটর সাইকেলে করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে বেপরোয়াভাবে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। আবদুল্লাহ সুমনের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে জানান, খবর পেয়েই পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলির কার্তুজ, একটি ছুরি, একটি ওয়াকিটকি ও একটি স্যান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ।
রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের প্রস্তুতি সভা শেষে বাড়ি যাবার পথে নেতাকর্মীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। রাউজান উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক চৌধুরী অভির নেতৃত্বে ইমাম হোসেন, আলতাফ চৌধুরী টুটুলও জনি চৌধুরীসহ ৭-৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালায়। তারা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাউজান থানায় বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ করেছিলেন কোয়েপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন রানা নামে এক ব্যক্তি। তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন। তার ভাগ্নে রাউজান উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য হারুনুর রশীদ তার গ্রামের বাড়ি দেখাশোনা করেন। তিনি গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী।
জসিম উদ্দিন রানা অভিযোগ করেন, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা ইমাম হোসেন সঙ্গে বিরোধ আছে হারুনুর রশীদের। ইমাম হোসেন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং গিয়াস কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গত সোমবার (৩ নভেম্বর) হারুনুর রশীদের সঙ্গে ইমাম হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে পরদিন দুপুরে ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে শেখ মোহাম্মদ, ইশতিয়াক চৌধুরী অভি, মোহাম্মদ আলতাফ উদ্দিন চৌধুরী টুটুল, জনি চৌধুরীসহ আরও ২০-২৫ জন মিলে জসিম উদ্দিন রানার বসতঘরে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়।
এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন রানা থানায় অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাউজান উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক চৌধুরী অভির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় আহতরা হারুনুর রশিদের পক্ষের লোক হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, অভির কাছে একাধিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরেছিল। গত (বুধবার) রাতে অস্ত্র দিয়ে অভির গুলিবর্ষণের তথ্যপ্রমাণও পুলিশ পেয়েছে। তবে অভি নিজেকে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ভাতিজা পরিচয় দিয়ে এলাকায় ও প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন।