ঢাকা: রাজধানী ঢাকার আকাশ আজ ধূসর, ধোঁয়াটে আর ভারী। চোখে জ্বালা, শ্বাস নিতে কষ্ট— এ যেন শহরের প্রতিদিনের বাস্তবতা। আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের (IQAir) সর্বশেষ লাইভ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।
বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণের মান AQI ১৭২, যা “অস্বাস্থ্যকর” (Unhealthy) পর্যায়ে পড়ে। অর্থাৎ এই বাতাসে দীর্ঘসময় অবস্থান করলে সুস্থ মানুষও শ্বাসকষ্ট, কাশি, চোখে জ্বালাপোড়া বা মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। শিশু, বয়স্ক ও হৃদরোগী মানুষদের জন্য এই বাতাস আরও বিপজ্জনক।
এদিকে বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি, স্কোর ৬৭৫। দ্বিতীয় স্থানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, স্কোর ২১৬। তৃতীয় স্থানে চীনের বেইজিং, স্কোর ২০৫।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
ঢাকার দূষণের মূল কারণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে—
ইটভাটা ও নির্মাণকাজের ধুলা: রাজধানীর আশপাশে হাজারো ইটভাটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে।
যানবাহনের ধোঁয়া: পুরনো ও রক্ষণাবেক্ষণহীন গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান উৎস।
অপরিকল্পিত নগরায়ন: নির্মাণস্থলে ধুলা নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা না থাকা।
বর্জ্য পোড়ানো: অনেক এলাকায় খোলা জায়গায় প্লাস্টিক ও বর্জ্য পোড়ানো হয়, যা মারাত্মক ক্ষতিকর গ্যাস ছড়ায়।
দূষণের প্রভাব:
শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি,
শিশুদের ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত,
চোখে জ্বালাপোড়া ও ত্বকের সমস্যা,
দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যানসারের আশঙ্কা।
করণীয়:
বায়ুদূষণ রোধে সরকার ও নাগরিক—উভয়েরই ভূমিকা প্রয়োজন। সরকারের জন্য প্রস্তাবনা:
পুরনো গাড়ি ও ইটভাটা বন্ধ করা,
নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি প্রয়োগ,
নগরে সবুজায়ন ও বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি,
শিল্প এলাকায় বায়ু পরিশোধন যন্ত্র বাধ্যতামূলক করা।
নাগরিকদের করণীয়:
বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, নিজের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক রাখা, অপ্রয়োজনে বর্জ্য পোড়ানো থেকে বিরত থাকা, গাছ লাগানো ও আশপাশে সবুজ পরিবেশ রক্ষা করা।
ঢাকা শুধু একটি শহর নয়— এটি কোটি মানুষের শ্বাসের ভরসা। অথচ এই শহরের বাতাসই আজ সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই শহর হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।