পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় পতাকা স্ট্যান্ড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পঞ্চগড় জেলার সমন্বয়ক ফজলে রাব্বীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান, এনসিপির বোদা উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী শিশির আসাদ, কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল প্রধান, জেলা জাগপার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আলম বিপ্লব, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওয়াসিস আলম ও ওরিয়র্স অব জুলাই পঞ্চগড়ের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘সরকারি কর্মসূচিতে ফজলে রাব্বীর ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা শুধু একজন জুলাই আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধার ওপর নয়, বরং চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও রাষ্ট্রের প্রশাসনিক মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত।’
দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক সাহসী যোদ্ধার ওপর এমন পরিকল্পিত হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা মুক্তচিন্তা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করেন, তাদের ওপর বারবার হামলা চালিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ জানাবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে’। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
এদিকে, মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সেখানে হামলাকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ ও প্রশাসনের সকল কর্মসূচি থেকে তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা, আন্দোলনকালীন পঞ্চগড়ের অন্যতম সমন্বয়ক জনাব ফজলে রাব্বীর ওপর একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সামনে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন রঞ্জু এবং উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সকল সরকারি কর্মসূচি থেকে অভিযুক্তদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘মূলত আমি প্রশাসনের দাওয়াতে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। আমার ওপর তাদের আক্ষেপের কারণ ছিল- আমি কেন লাইনের সামনে দাঁড়ালাম! আমিতো কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করতে যাইনি। এখন সামনে গেলে তাদের সহ্য হয় না! জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় কেউতো মিছিলের সামনে যেতে বাধা দেয়নি, কিন্তু এখন কেন?’
তেঁতুলিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘‘সেদিন লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে একটু বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। মূলত ফজলে রাব্বী আমাদের উপজেলা বিএনপির সভাপতিকে সরিয়ে দিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন? পিছনে কিছু ছাত্রদল-যুবদলের ছেলে ছিল, সেখানে একট হট্টগোল হয় এবং পরে চুপচাপ হয়ে যায়। পরে আবার ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডের উদ্বোধনের ওখানে ফজলে রাব্বী আবার আমাদের রঞ্জু ভাইয়ের (উপজেলা বিএনপির সভাপতি) সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি সমস্যা বলেন তো? তখন ফজলে রাব্বী কোনো কথা না বলে এদিকে এসে মুখের ভাষা খারাপ করে বিএনপি নিয়ে কথা বলেন। তখনতো আমরা চুপ থাকবো না। পরে সেখানে প্রশাসনের লোকজন ছিল তাকে সরিয়ে নিছে, আমরাও চলে আসছি। তাকে কোনো ধাক্কা দেওয়া হয়নি, কিছু করাও হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান করি। ফজলে রাব্বী আমাদের ছোট ভাই, তাকেও সম্মান করি। কিন্তু সেদিন সে একটুতেই উত্তেজিত হয়ে মুখের ভাষা খারাপ করায় পাশে থাকা ছাত্রদল-যুবদলের ছেলেরা একটু উত্তেজিত হয়।’
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুসা মিয়া বলেন, ‘সেদিন হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে সরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’