ঢাকা: বর্তমানে দেশে এখনো জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বাইরে। এ বিষয়ে শতভাগ সরকারের অঙ্গীকার থাকলেও আইনগত সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবায়নের ঘাটতিই প্রধান বাধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর বিএমএ ভবনে ‘বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় অংশ নিয়ে এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ৩০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার মাত্র ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড় হার যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান আইনে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব পরিবারকে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যসেবার ভূমিকা ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। অথচ দেশে প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু জন্মগ্রহণ করে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে।
বক্তারা বলেন, ‘হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিবন্ধনের দায়িত্ব অর্পণ এবং বিদ্যমান আইন শক্তিশালী করলেই শতভাগ নিবন্ধনের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শুধু প্রশাসনিক তথ্য নয়, এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার, উত্তরাধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় সুবিধাগুলো নিশ্চিত হয়। অপরদিকে নিবন্ধনবিহীন নাগরিক শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও পরিচয়হীনতার ঝুঁকিতে থাকে।’
তারা বলেন, অনেক দেশ হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করে ইতোমধ্যেই প্রায় শতভাগ নিবন্ধন নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশেরও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এলক্ষ্যে আইন সংস্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।’
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নিবন্ধকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আন্ত-খাত সমন্বয় শক্তিশালী করতে হবে।’
কর্মশালায় বক্তা হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. মঈন উদ্দিন, জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার কাওসার রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং কোঅর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।