ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক বসার পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ছোট গ্রাহকদের মধ্যে টাকা ফেরত পাওয়ার আশা জেগেছে। যদিও বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) সারাদিন পর্যন্ত ২ লাখের কম টাকার চেক নিয়ে ফেরত এসেছেন অধিকাংশ গ্রাহক। কোন কোন গ্রাহক ৩ হাজার টাকার চেক দিলেও তা নগদায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে টাকা ফেরতের বিষয়ে আশাবাদী তারা। ছোট গ্রাহকদের টাকা শিগগিরই ফেরত দেওয়া হবে প্রশাসকরা আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু বড় গ্রাহকদের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছু মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার গ্রাহক নুরুন্নাহার জানিয়েছেন, প্রশাসক বসানোর খবর শুনে ৩ হাজার টাকার চেক দিলেও টাকা পাওয়া যায়নি। তবে আগে টাকা কবে ফেরত পাওয়া যাবে, সে নিশ্চয়তা না মিললেও এবার তারা আইন মেনে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেওয়ার আশা দেখিয়েছেন।
এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক ফাহিমা ইসলাম জানান, তার ১৫ লাখ টাকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা মিলেনি। আর সরকারের টাকা ছাড় হলে পাওয়া যাবে- এমন প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির ঢেঁকুর গেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।
আমানত সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, সম্প্রতি সংশোধীত আমানত বিমা আইন সংশোধনের ফলে একজন গ্রাহকের আমানত ফেরতের সর্বাচ্চ সীমা বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। যা আগের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী ব্যাংক বন্ধ হলে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বড় গ্রাহকের বিষয়ে বিষয়ে একই পরিমাণ টাকার কথাই বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ না সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হচ্ছে তাদের অর্থ নিরাপদ, ততক্ষণ গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে না। তবে বিমার মাধ্যমে ২ লাখ টাকা করার উদ্যোগ প্রথমেই ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। কিন্তু বড় গ্রাহকদের জন্য কিছু করতে হবে। ব্যাংক লুটপাটকারী ও তাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে গ্রাহকের আস্থা বাড়বে না এবং সুযোগ হলে লুটেরা বারবার ছোবল মারবে। আর গেটকিপাররা আইন ও বাস্তবতার দোহাই দিয়ে পার পাবেন, যা কাম্য না।
রাজধানীর বনানীর ইউনিয়ন ব্যাংকের শাখা গ্রাহক মনির হোসেন জানান, ২০ হাজার টাকার জন্য গিয়েছিলাম শাখায়। সেখানে জানানো হয় যে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিয়েছে। এখন এটি সরকারি ব্যাংক। টাকা ফিরে পেতে জোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সময় সম্পর্কে কিছু জানাতে পারে নি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রশাসক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার জানান, আমরা কাজ শুরু করেছি। গভর্নরের নির্দেশনা ও আইন মেনে সব করা হচ্ছে। এখন ছোট গ্রাহকদের টাকা দেওয়া শুরু হয় নি। তবে এ মাসে না হলেও আগামী মাসে যারা চাবেন, তারা ২ লাখ পর্যন্ত টাকা ফেরত পাবেন।
বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিনেন্স ২০২৫ অনুযায়ী, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন বা দেউলিয়া প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যক্ষভাবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, তত্ত্বাবধান, সম্পদ বিক্রয় বা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া তদারকি করতে পারবে। আর এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারগন ক্ষতি পূরন পাবে না।
এদিকে বুধবার (০৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। অর্থাৎ ‘নেগেটিভ ইকুইটি’ অবস্থায় চলে গেছে। ফলে তাদের শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য শূন্য ধরা হবে এবং কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আমানতকারীদের অর্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত, তাই কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিবিড়ভাবে তদারকি করবে, যাতে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকিং সেবা পেতে থাকেন। পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবনায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে সরকার।