খুলনা: প্রান্তিক নগর ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল জীবনধারা গড়ে তুলতে “ফ্যাসিলিটেটিং লাইভলিহুডস থ্রু অ্যাডভান্সিং স্মার্ট হ্যাবিট্যাটস ইন পেরি-আরবান বাংলাদেশ (FLASH)” প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভা খুলনার হোটেল সিটি ইন-এ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো- বাংলাদেশের উপকূল ও প্রান্তিক শহরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় স্মার্ট ও টেকসই হ্যাবিট্যাট সমাধান প্রচার করা, যা মানুষের জীবিকা, আবাসন ও জীবনমান উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ফ্ল্যাশ প্রকল্প স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু-সহনশীল জীবিকা গড়ে তোলার এক সময়োপযোগী ও রূপান্তরমূলক উদ্যোগ। এটি বিজ্ঞান, নীতি ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে একটি কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করবে।
উপাচার্য আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় টেকসই উন্নয়ন, নগর স্থিতিস্থাপকতা ও জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নেদারল্যান্ডসের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটি, এবং ইরাসমাস ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগে যুক্ত রয়েছে।
সম্প্রতি উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় জলবায়ু অভিযোজনবিষয়ক সামার স্কুল আয়োজনের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আমরা সেই অভিজ্ঞতার আলোকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (ICCDM)’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই ইনস্টিটিউট জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও স্থিতিস্থাপক নগরায়ণ নিয়ে গবেষণা ও নীতি সংলাপে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তিনি আরও যোগ করেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে পাইকগাছায় একটি নতুন উপকূলীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যভিত্তিক গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন যে ফ্ল্যাশ প্রকল্পের সহযোগিতায় এই উদ্যোগ আরও কার্যকর ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী হবে।
তিনি প্রকল্পের আন্তর্জাতিক গবেষক ড. বিশ্বজিৎ মল্লিক-এর প্রশংসা করে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে ড. মল্লিকের অবদান অনন্য। তার প্রচেষ্টায় আমরা আজ বিশ্বমানের গবেষণা ও নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারছি।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাংগীর হোসেন, পিএসসি, এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান। তারা প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার ও শহর পরিকল্পনা সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শেখ সিরাজুল হাকিম। প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক বুয়েটের প্রফেসর ড. শাহজাহান মন্ডল। আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. বিশ্বজিৎ মল্লিক ও অধ্যাপক ড. হ্যান্স মিডেলকপ, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি রটারড্যামের মার্টে ভ্যান এরড, ওয়াগেনিনজেন ইউনিভার্সিটির ড. কামোনাশিস হালদার, এবং উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হেলিন মিস ও ড. এস. এম. লাবিব।
উন্মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর ড. শাহনেওয়াজ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. মনিরুল ইসলাম। অংশগ্রহণকারীরা শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নয়নে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কৌশল, স্থানীয় সম্পৃক্ততা ও নীতিগত প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা মত দেন যে, ফ্ল্যাশ প্রকল্প খুলনা অঞ্চলের জন্য একটি গবেষণাভিত্তিক উদ্ভাবনী কর্মসূচি হিসেবে জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়নের মডেল তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে সারা দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে।