Thursday 06 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্রিসমাস দ্বীপে এআই ডাটা সেন্টার
চীনের ওপর কৌশলগত নজরদারি যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩ দেশের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৬ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:২৮ | আপডেট: ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৪২

অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় এলাকা ক্রিসমাস দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

গুগল এই বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে একটি ক্লাউড চুক্তি সই করেছে। চুক্তি সইয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় এলাকা ক্রিসমাস দ্বীপে একটি বিশাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ডেটা সেন্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, এই দ্বীপটিকে ভারত মহাসাগরে চীনের সাবমেরিন এবং অন্যান্য নৌ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টলাইন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যালোচিত নথি এবং কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৫০ কিলোমিটার (২২০ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত এই ছোট দ্বীপে ডেটা সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা এর আগে কখনও প্রকাশ করা হয়নি। এর প্রত্যাশিত আকার, খরচ ও সম্ভাব্য ব্যবহারসহ অনেক তথ্য এখনো গোপন রয়েছে। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সুবিধাটি দ্বীপটির জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হবে। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে এই দ্বীপটিকে ভারত মহাসাগরে চীনের সাবমেরিন এবং অন্যান্য নৌ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টলাইন হিসেবে দেখছেন।

ক্রিসমাস দ্বীপ শায়ার কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন এবং কাউন্সিল সভার রেকর্ডে দেখা গেছে, অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড’র মালিকানাধীন গুগল দ্বীপটির বিমানবন্দরের কাছাকাছি জমি ইজারা নিতে এবং স্থানীয় একটি খননকারী সংস্থার সঙ্গে এর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে চুক্তি করতে উন্নত আলোচনা চালাচ্ছে।

তবে, গুগল বা অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

প্রতিরক্ষার জন্য ফ্রন্টলাইন

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত একটি সাম্প্রতিক টেবিলটপ যুদ্ধ মহড়া আঞ্চলিক কোনো সংঘাতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ক্রিসমাস দ্বীপের ভূমিকাটিকে একটি অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে তুলে ধরেছে। বিশেষত মানুষবিহীন অস্ত্র ব্যবস্থা উৎক্ষেপণের জন্য এর সুবিধা অনেক।

সাবেক মার্কিন নৌ কৌশলবিদি ব্রায়ান ক্লার্ক রয়টার্সকে বলেছেন, চীন বা অন্য কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংকটের সময় ক্রিসমাস দ্বীপে একটি অগ্রবর্তী ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ নোড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

হাডসন ইনস্টিটিউটের এই ফেলো বলেন, ‘ডেটা সেন্টার আংশিকভাবে ভবিষ্যতে আপনার প্রয়োজনীয় এআই-সক্ষম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল করার অনুমতি দেবে, বিশেষত যদি আপনি নজরদারি, লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতকরণ এবং এমনকি আক্রমণেও মানুষবিহীন সিস্টেমের ওপর নির্ভর করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাব-সি ক্যাবল স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ এবং নির্ভরযোগ্যতা দেয়, কারণ সংকটের সময় চীন স্যাটেলাইট যোগাযোগ জ্যাম করতে পারে। যদি ক্রিসমাসে আপনার একটি ডেটা সেন্টার থাকে, তবে ক্লাউড পরিকাঠামোর মাধ্যমে আপনি এর অনেক কাজ করতে পারবেন।‘

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ গত জুলাই মাসে গুগলের সঙ্গে একটি তিন বছরের ক্লাউড চুক্তি করেছে। গুগল গত মাসে ক্রিসমাস দ্বীপকে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য প্রথম সাব-সি ক্যাবল স্থাপনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশগত অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে। ডারউইনে বছরের ছয় মাস মার্কিন মেরিন কর্পস অবস্থান করে।

সামরিক কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় সমর্থন তৈরি

ক্রিসমাস দ্বীপ শায়ার সভাপতি স্টিভ পেরেইরা বলেছেন, তার প্রশাসন চূড়ান্ত নির্মাণ অনুমোদন দেওয়ার আগে প্রস্তাবিত ডেটা সেন্টারের সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব পরীক্ষা করছে।

আগে খারাপ টেলিযোগাযোগ এবং চাকরির সুযোগের অভাবে ভুগতে থাকা এই দ্বীপটি, যা মূলত আশ্রয়প্রার্থী আটক কেন্দ্র এবং লাখ লাখ লাল কাঁকড়ার বার্ষিক স্থানান্তরের জন্য পরিচিত, এখন সুযোগের সন্ধান করছে। পেরেইরা বলেন, ‘এর প্রতি সমর্থন আছে, তবে শর্ত হলো এই ডেটা সেন্টার যেন পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক মূল্য দিয়ে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখে।’

পেরেইরা আরও উল্লেখ করেছেন, ‘ডেটা সেন্টারটি আফ্রিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী ভারত মহাসাগরে অবস্থিত হওয়ায় এটি গুগলের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে আসবে, পাশাপাশি এর প্রতিরক্ষা ব্যবহারও রয়েছে। দ্বীপটি এখন প্রতিরক্ষার জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ।’

অবসরপ্রাপ্ত নৌ কমোডোর পিটার লেভি বলেন, ‘ক্রিসমাস দ্বীপ সুন্দা প্রণালী, লম্বক প্রণালী, মালাক্কা প্রণালী দিয়ে কী যাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য উপযুক্ত স্থানে রয়েছে।‘