- রংপুর: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তরের রাজনৈতিক দুর্গ রংপুরে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মাঠ। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর হারানো আসন পুনরুদ্ধারে উদ্যমী হয়ে উঠেছে বিএনপি, পাশাপাশি প্রচারে নেমেছে জামায়াতে ইসলামি ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একসময় জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা এই জেলায় এখন রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন রূপ নিচ্ছে।
বিএনপির প্রকাশিত ২৩৭ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় রংপুরের ছয়টি আসনেই মনোনয়ন পেয়ে প্রচার শুরু করেছেন দলের প্রার্থীরা। ৩৯ বছর ধরে হারানো এসব আসন পুনরুদ্ধারে নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন।
রংপুর-৩ (সদর) আসনে মনোনীত প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু বুধবার দুপুরে কেরামতিয়া জামে মসজিদে জোহরের নামাজ আদায়ের পর শাহ কারামত আলী (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর কোর্ট চত্বর, কাছারি বাজার, সিটি বাজার ও নবাবগঞ্জ বাজারে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ করেন। তিনি বলেন, “এ আসনে এতদিন উন্নয়ন হয়নি। এবার ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করে ‘সমৃদ্ধ রংপুর’ গড়ব। উন্নয়নের ১৯টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি।”
এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, চরমোনাইয়ের আমিরুজ্জামান পিয়াল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আলমগীর হোসেন নয়নও নিজেদের মতো প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বিকেলে বাবনপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে প্রচার শুরু করেন। শহিদের পরিবারের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের জয় সুনিশ্চিত।” এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী নুরুল আমিন এবং এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তাকিয়া জাহান চৌধুরীও বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ছেন।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি কর্পোরেশনের অংশ) আসনে প্রার্থী মোকাররম হোসেন সুজন গণসংযোগ শুরু করেছেন। ১৯৭৯ সালে এ আসন থেকে বিএনপির যাদু মিয়া ও পরে তার ছেলে শফিকুল গণি স্বপন এমপি হয়েছিলেন। এরপর চার দশক জাতীয় পার্টির দখলে। সুজন বলেন, “সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বিএনপি। ষড়যন্ত্র ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয় শতভাগ নিশ্চিত।”
আর জামায়াতের প্রার্থী রংপুর মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। গণসংযোগকালে তিনি বলেন, ‘১৯৮৬-এর নির্বাচনে সুজা মিয়া পীর সাহেবকে কারচুপির অভিযোগে হারানো হয়েছিলো। এখানে জামায়াতের শক্ত অবস্থান আছে। জাতীয় পার্টির কর্মীরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, আর সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়ছে।”
রংপুর-২ আসনে মোহাম্মদ আলী সরকার একইভাবে প্রচারে নেমেছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আর রংপুর-২ আসনের জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রতিদিনই সমাবেশ, উঠান বৈঠক করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা মো. আশরাফ আলীও মাঠে নেমেছেন।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম রব্বানী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। জামায়াত অধ্যুষিত এ আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে। তিনি বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ভোট কেড়ে নিয়েছিল। এবার ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করব।”
আর জামায়াতের একক প্রার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, “আগে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছি। তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে জামায়াত ব্যাপক ভোটে জয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।”
একইভাবে নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী রংপুর-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী এমদাদুল হক ভরসা। কাউনিয়া-পীরগাছার গ্রামগঞ্জে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে ১৭ বছর আমাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ২০১৮-এ মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমার জয় নিশ্চিত ছিল। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির হারানো আসন পুনরুদ্ধার হবে।”
এই আসনে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও বেশ শক্তিশালী। জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর আমির এটিএম আজম খান দিন রাত এক করে ভোট চাইছেন। তিনি বলেন, “সব শ্রেণির মানুষ জামায়াতকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আশা করছি মানুষ জামায়াতকে সমর্থন দেবে।”
এদিকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন গণসংযোগ শুরু করেছেন অনেক আগে থেকেই। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিনই ভোট প্রার্থনায় নামছেন। আখতার হোসেন বলেন, “চব্বিশের জুলাইয়ের আন্দোলন ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছে। রংপুর বরাবর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। আগামী নির্বাচনে মানুষ এনসিপিকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে।”
এছাড়া এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ হাসানও গণসংযোগ চালাচ্ছেন।