মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ জন সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত এই সহকারী শিক্ষকরা চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের সুবিধা পান। এরপর ২০১৮ ও ২০১৯ সাল থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাদের প্রথম উচ্চতর গ্রেড প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে সেই সুবিধা ভোগ করলেও চলতি মাস থেকে কোনো পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই তাদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের আলোকে মুন্সীগঞ্জ হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে জানান, এসব শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড বাতিল হতে পারে। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বেতন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি।
সদরের নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা হঠাৎ দেখি বেতন বন্ধ। জানতে শিক্ষা অফিসে গেলে বলা হয় জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নির্দেশ এসেছে। কিন্তু সেই চিঠি কেউ আমাদের দেখাতে পারেনি।’
একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
শিক্ষকরা দাবি করেছেন, ওই কর্মকর্তা তাদের ‘অকথ্য ভাষায় গালাগাল’ করেন এবং অফিসে প্রবেশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
শিক্ষক খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমরা তো রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার কষ্টদায়ক। শিক্ষকরা এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাদের দাবি, কোনো ভুল থাকলে তা যাচাই করে সংশোধন করা হোক, কিন্তু একভাবে বেতন বন্ধ রাখা অযৌক্তিক ও অমানবিক।
জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিট অফিসার মেহেদি হাসান শরীফ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও গালাগালি করার দাবি মিথ্যা। তারা উল্টো ২০-২৫ জন নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আর তাদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চিঠির কারনে।’
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞা বলেন, ‘জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের লিখিত চিঠির প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকদের বেতন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের দাবি-গ্রেড উন্নীতকরণ সমস্যায় বেতন আটকে গেছে তাদের। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। এরপর থেকে ওই শিক্ষকরা আগের গ্রেডে নিয়মিত বেতন পাবেন।’