নেপালের হিমালয়ে বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে মেরা পিকের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন পর্বাতোরোহী মো. আহসানুল হক খন্দকার। পর্বতারোহীদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অনিশ্চিত শরৎ মৌসুমের মধ্যেই তিনি ৬ হাজার ৪৬১ মিটার উঁচু এই শৃঙ্গ জয় করেন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস ও তুষারপাতের বাধা পেরিয়ে তিনি চূড়ায় পৌঁছান।
করপোরেট পেশাজীবী ও পর্বতারোহী আহসানুল গত ২৭ অক্টোবর কাঠমান্ডু থেকে তার অভিযান শুরু করেন। তিনি লুকলা, কোটে ও খারে হয়ে ক্লাসিক ট্রেইল ধরে মেরু হাই ক্যাম্প থেকে রাতে চূড়ার দিকে আরোহণ শুরু করেন। অভিযান শেষে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল ভয়াবহ। কিন্তু চূড়া থেকে চারপাশ দেখার পর পর্বতের সব কষ্ট সার্থক মনে হয়েছে।’
পাঁচ বছর আগে বান্দরবানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলোতে আরোহণের মাধ্যমে আহসানুলের হিমালয় যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০২০ সালে তিনি নেপালে অভিযান শুরু করেন এবং অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প, মারদি হিমাল ও অন্নপূর্ণা সার্কিট সম্পন্ন করেন। ধীরে ধীরে আরও উঁচু শৃঙ্গের দিকে মনোযোগ দিয়ে তিনি ২০২৩ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শীতকালে ইয়ালা শৃঙ্গ (৫,৫২০ মিটার) জয় করেন, যা তার সহনশীলতা ও আত্মবিশ্বাসকে নতুন মাত্রা দেয়।
মেরা পিক এখন পর্যন্ত আহসানুলের আরোহণ করা সর্বোচ্চ চূড়া। তার মতে, ‘পর্বত মানুষকে বিনয়ী হতে শেখায়। শরীর ও মন যে কতটা সহ্য করতে পারে, তা এখানে এসে শেখা যায়।’
উচ্চতার হাতছানিতে করপোরেট চাকরিজীবী আহসানুল পর্বতারোহণকে মুক্তির সন্ধান হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘করপোরেট জীবনটা দমবন্ধকর মনে হতো। কিন্তু পর্বতে এলে নিজেকে জীবন্ত মনে হয়।’
এই পর্বতারোহী আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা করছেন। সঙ্গে নিয়ে আসছেন বাংলাদেশের পতাকা এবং নতুন স্বপ্ন—একদিন মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়ানোর।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি সঠিক তহবিল ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকে, আমি আরও উঁচুতে যাব। পর্বতারোহণ মানে শুধু চূড়ায় পৌঁছানো নয়, বরং ধাপে ধাপে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা।’