Saturday 08 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুন্ড্র ইকোনমিক জোন, পালটে যাবে উত্তরাঞ্চলের চিত্র

আবদুর রহমান টুলু, স্পেশাল করেসপডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৫ | আপডেট: ৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:১৫

বগুড়ার প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আর পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বেসরকারি ‘প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন।’ সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা দেশের প্রথম প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন পূর্ণভাবে চালু হলে আন্তর্জাতিকমানের গ্লাস ফ্যাক্টরির পাশাপাশি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ভেষজ তেল উৎপাদন কারখানা, ফিডমিল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখান বিস্তার হবে।

প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোনের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে ১২০০ কোটি বিনিয়োগ করে উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়েছে এই গ্লাস ফ্যাক্টরি। এতে করে পালটে যাবে উত্তরাঞ্চলের চিত্র। বেসরবারি ব্যবস্থাপনায় এত টাকা বিয়োগ করার খবরে বিভিন্ন শিল্পমালিকরা এই জোনে নিজেদের কারখানা স্থাপন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার গোকুল এলাকায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমি নিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রথম এ বেসরকারি ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ৪০০ বিঘা জমি দিয়ে শুরু করা ইকোনোমিক জোনের জন্য আরো একশ বিঘা জমি কেনার কাজ চলমান রয়েছে। সেক্ষেত্রে জোনটির মোট জমি দাঁড়াবে ৫০০ বিঘা। প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন উদ্যোক্ত সংগঠন ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) ও অংগ প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের আশা উত্তরাঞ্চলের প্রথম বেসরকারি এ ইকোনোমিক জোনে বিনিয়োগ হবে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা আর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে ৫ হাজারের বেশি মানুষের। এ জোনে প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ভেষজ তেল উৎপাদন কারখানার পাশাপাশি ফিডমিল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা। ইতোমধ্যেই দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাক্টরী এ জোনে প্রতিষ্ঠা করতে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ইকোনোমিক জোনে প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী নেসকো’র চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বিসিএল গ্লাস ইন্ড্রাট্রিজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাসের প্রাথমিক চাহিদা ধরা হয়েছে দেড় লাখ কিউবিক মিটার। তবে বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরি চালু করতে প্রয়োজন ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস। ইতোমধ্যেই এ ইকোনোমিক জোনে বিসিএল গ্লাস ইন্ড্রাট্রিজ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হয়েছে। গ্যাস সংযোগ পেলেই প্রায় ১২০০ কোটি টাকার গ্লাস ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যাবে আর তৈরি হবে এক মিলিমিটার থেকে ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরুত্বের বিভিন্ন ধরনের গ্লাস। প্রস্তাবিত এ প্রাইভেট পুন্ড্র ইকোনোমিক জোন অনুমোদন দিতে গত বছরের ৭ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্তৃপক্ষের আশা কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি অনুমোদন পাওয়া যাবে।

বগুড়ায় বিভিন্ন শিল্পমালিকরা জানান, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থার ট্যানারি, রড-সিমেন্ট, মোটরবাইক ও গাড়ি তৈরি কারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে বগুড়ায়। এসব শিল্পের অনেকগুলোই প্রস্তাবিত পুন্ড্র ইকোনোমিক জোনে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এ জোনে কয়েক বছরের মধ্যেই বিনিয়োগ হবে বড় অংকের টাকা। সরাসরি সড়ক ও রেল সুবিধা রয়েছে। এর সঙ্গে বিমানবন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে গেছে অনেক দূরে। এ অবস্থায় এ ইকোনোমিক জোনে সরকারি সহযোগিতা পেলে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে।

বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক আবিদ হোসাইন জানান, বিভিন্ন ধরনের গ্লাসের পাশাপাশি রঙ্গিন গ্লাসও তৈরি হবে। সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত এক হাজার শ্রমিকের। পরিকল্পনা আছে এ জোনেই তৈরি হবে মিরর প্লান্ট, টেম্পারিং প্লান্ট ও ফ্লোট গ্লাসের পাশাপাশি গাড়ীরও বিভিন্ন ধরনের গ্লাস। বিসিএল গ্লাস ফ্যাক্টরিতে তৈরি গ্লাসের মান হবে আর্ন্তজাতিক এবং রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাট্রি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, শিল্পনগরী বগুড়ার দিকে শিল্প উদ্যাক্তাদের নজর আছে। কিন্তু বগুড়ায় নেই কোনো অর্থনৈতিক জোন অথবা অর্থনৈতিক অঞ্চল। দুটি বিসিক শিল্প নগরীতেও নেই কোনো জায়গা। ফলে শিল্প উদ্যাক্তরা আসতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে এ ইকোনোমিক শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সংস্থা (বিসিক) বগুড়ার উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, জায়গা পেলে বগুড়ায় এখনই দেড় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্ভব। কিন্তু, জায়গার অভাবে বিভিন্ন শিল্প উদ্যাক্তারা এগিয়ে আসছেন না। জমি এবং সহজ শর্তে বিভিন্ন সুযোগ দিতে পারলে বগুড়ায় ভালো কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারবে। যেখানে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।

সারাবাংলা/আরটি/জিজি
বিজ্ঞাপন

মেদ ঝরাতে ইয়োগা
৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:১৯

আরো

সম্পর্কিত খবর