ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো এখনও পুরোনো ক্ষমতাকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে, যেখানে ব্যবসায়ী, সিভিল সমাজের একাংশ এবং সামরিক শক্তি মিলে একটি অদৃশ্য বলয় তৈরি করেছে। তারা চায় না কোনো নতুন বা অপ্রতিরোধ্য শক্তি সংসদ কিংবা কমিশনে প্রভাব বিস্তার করুক।
শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার তরুণ জনগোষ্ঠীর রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন তাদেরই অপরাধী হিসেবে গণ্য করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি জুলাই সনদের আইনি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এই অপরাধীগণ শুধু বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।এর পরিণতি আদালত পর্যন্ত গড়াবে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল, মাত্র আট মাস ধরে সংগ্রাম করছি। তরুণদের দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনকে রাজনৈতিক পার্টি গঠন করতে বাধ্য করা হয়েছে, কারণ ঐকমত্য কমিশনে অংশগ্রহণের জন্য সেটিই ছিল শর্ত।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ গত ৫৩ বছর ধরে একটিমাত্র লক্ষ্যেই লড়ছে—অসীম ক্ষমতার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া। “এই সংগ্রাম কখনও ভোটের জন্য, কখনও স্বৈরাচার পতনের জন্য, আবার কখনও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে হয়েছে,” বলেন সামান্তা।
তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে। “এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরাধীন রাখা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্য অপরিবর্তিত থাকে,” তিনি মন্তব্য করেন।
সামান্তা শারমিন অভিযোগ করেন, “যারা গত বছর হতাশায় ছিলেন, তারাই এখন বড় বড় বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু তারা চায় না ফ্যাসিবাদী কাঠামোর পরিবর্তন—তারা শুধু ক্ষমতার হাতবদল চায়।”
তিনি বলেন, কাঠামোগত ও গুণগত পরিবর্তনের লড়াই সম্ভব হয়নি, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতার কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। “এই দলগুলোই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে, নির্বাচন পেছাতে চাইছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল নিচ্ছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান নেতৃত্ব দুর্নীতিগ্রস্ত দালালদের হাতে বন্দী। এই নেতৃত্ব পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং নতুন প্রজন্মের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে চায়।”
তিনি আরও দাবি করেন, কমিশন ও এলাকায় গুণ্ডামি ও মাস্তানি চালিয়ে ভোট আদায়ের সংস্কৃতি পুরোনো দলগুলো এখনো বজায় রেখেছে। “তারা ভাবে এভাবেই ভোট সংগ্রহ সম্ভব, কিন্তু আমরা এই সংস্কৃতি মানি না,” বলেন সামান্তা শারমিন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণে পরিষদ নির্বাচন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছিল, কিন্তু ঐকমত্যের পরও ‘আলীকে’ (কমিশনের একজন কর্মকর্তা) তা লিখতে দেওয়া হয়নি—যা প্রমাণ করে যে গোষ্ঠীগত শক্তিগুলো এখনো পরিবর্তনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই জ্যেষ্ঠ নেত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তির একমাত্র পথ হলো জুলাই সনদের পূর্ণ আইনি বাস্তবায়ন। এ সনদই তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন, জনগণের দাবি এবং রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তরের রূপরেখা।”
তিনি আহ্বান জানান, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যেন সনদের বাস্তবায়ন বিলম্বিত না করে, বরং জনগণের রক্তে লেখা সেই চুক্তিকে সম্মান জানায়।