Saturday 08 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা কেবল শ্রমিকদের আন্দোলন নয়, সমগ্র জনগণের’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৪০ | আপডেট: ৮ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৩০

বন্দর রক্ষার বিক্ষোভ সমাবেশে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় দেশের সর্বস্তরের জনগণকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর লালদিঘী মাঠে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), চট্টগ্রাম জেলার এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ার চর ইজারা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়েছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি চলছে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে পারে না। একদিকে নির্বাচিত সরকার নেই, জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই আবার পশ্চিমা বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদীদের এক বিরাট রকমের ইন্টারেস্ট এখানে কাজ করছে। ফলে আমাদের একদিকে যেমন নির্বাচন যেন ঠিকভাবে হয়, দ্রুত হয় – সেটাও দেখতে হবে, আবার চট্টগ্রাম বন্দরসহ আমাদের সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলব, এটা কেবলমাত্র শ্রমিকদের নয়, এটা সমগ্র জনগণের আন্দোলন। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করা দরকার। এখানে পেশাজীবী সংগঠনগুলোতে সম্পৃক্ত করা দরকার। এখানে নাগরিকদের যত রকম ফোরাম আছে, তাদের জায়গা থেকে তারা যেন আওয়াজ তোলে, এজন্য নানাদিকে গণসংযোগ করতে হবে। এভাবেই আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করতে পারব।’

‘মানুষ যদি জাগে, মানুষ যদি রুখে দাঁড়ায়, মানুষ যদি তার অধিকার আদায়ের জন্য সংঘবদ্ধ হয়, তাহলে কেউ তাকে রুখতে পারবে না। এখানে আজ শ্রমিক-কর্মচারীরা যুক্ত হয়েছেন, আপনারা অনেক বড় শক্তি অবশ্যই, কিন্তু এর সঙ্গে সব জনগণকে যুক্ত করতে হবে। তাহলেই আমরা এই সংগ্রামে বিজয়ী হবো, আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। বিশেষ কারণে বিশেষ ব্যবস্থায় এ সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কোনো সিদ্ধান্তই প্রকৃত অর্থে গণমুখী নয়।’

সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ছিনিমিনি খেলা সহ্য করা হবে না। ডক শ্রমিক, সিএন্ডএফ শ্রমিকসহ দেশের শ্রমজীবী মানুষের হাতেই বন্দর পরিচালনা হবে, বিদেশিদের হাতে নয়। বিগত সরকারের সময় নেওয়া একতরফা ইজারার সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনো মেনে নেবে না। সরকারকে অবিলম্বে এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির মাধ্যমে বন্দরসহ সারা বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্দর এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এটা দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। আমরা সিএমপি কমিশনারকে বলতে চাই, গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করুন। ভবিষ্যতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করা হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।’

সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ নভেম্বর নগরীর নয়াবাজার থেকে বড়পুল পর্যন্ত মশাল মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভ সমাবেশের পর হাজারো নেতাকর্মী গণমিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

টিইউসির কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন—বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, বন্দর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খোকন।