ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, শুধু সংস্কার নয়, এখন প্রয়োজন একটি মৌলিক পরিবর্তন—একটি ‘রিসেট বাটন’। তবে দুঃখজনক হলো, ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায়নি।
শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জারা বলেন, ‘মূলধারার রাজনীতিতে এখনো যোগ্য নারীপ্রার্থীর অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এত সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের পরও যদি নারীরা রাজনীতির মূলধারায় জায়গা না পান, তবে তা কেবল রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা নয়, সমাজেরও আত্মসমালোচনার বিষয়।‘
জারা আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও সংস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছে—আগের সেই ব্যবস্থাই থাকবে নাকি আমরা একটি নতুন দিশায় যাব? আগের ব্যবস্থা ছিল এমন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল, এবং বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘সে ব্যবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অসম্ভব ছিল, কারণ এর নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ভর করত সেই ক্যাবিনেটের ওপর, যাদের কর্মকাণ্ডের ওপরই কমিশনকে নজরদারি করার কথা ছিল।’
এনসিপি নেত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কি সেই পুরনো কাঠামো ধরে রাখব, নাকি এমন একটি নতুন কাঠামো গড়ে তুলব যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিকার অর্থে নাগরিকদের জন্য কাজ করবে?’
তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘আর্টিকেল ৭০ বাতিল করা বা সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের আপস-আলোচনায় পরিবর্তিত বা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রকৃত ঐকমত্যের অভাব রয়েছে।’
২০০১ সালের বিএনপি সরকারের ইশতেহারে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও, ২০২৫ সালে এসে নারী জনপ্রতিনিধিদের জন্য মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করাকে তিনি ‘অগ্রগতির বদলে পশ্চাৎগামী পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দেন।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা নারীদের প্রতি ব্যর্থ হয়েছেন। এই কম শতাংশের দায় নেতৃত্বকেই নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সনদ ও কমিশনের রিপোর্টগুলোর বাস্তবায়নের রূপরেখা স্পষ্ট নয়। ঐকমত্য কমিশন, স্বাস্থ্য কমিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কোনো পরিবর্তন না আসায় জনগণের আস্থা ক্ষীণ হচ্ছে।’
তাসনিম জারা বলেন, ‘যে আন্দোলন, যে আকাঙ্ক্ষা এবং যে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল—তা যেন কেবল মুখের পরিবর্তনে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের এখন দরকার সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন, যাতে সত্যিকারের পরিবর্তন দেখা যায়।’