Saturday 08 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কার কমিশন নারীবিবর্জিত: শিরীন পারভিন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৫ ২২:০৭ | আপডেট: ৮ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৪৭

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক।

ঢাকা: সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে নারী প্রতিনিধিত্ব উপেক্ষিত হওয়ায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। তিনি বলেছেন, সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারীদের মতামতকে উপেক্ষা করা নারীবিবর্জিত ও বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ার প্রতিফলন।

শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘৫ আগস্টের রাস্তায় শিশু-কিশোরদের লড়াই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা একটি সুন্দর, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চায়। সেই চেতনা থেকেই আমরা নারী সংস্কার কমিশনের মূলমন্ত্র নির্ধারণ করেছি—একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো নারীদের সর্বস্তরে সমতা নিশ্চিত করা। এ জন্য গত চার মাস ধরে তারা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছেন, যাতে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা যায়।

‘নারীরা শুধু মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে চায়, সমাজে সহনাগরিক হিসেবে সমান অধিকার দাবি করে। ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু বিচার দেখতে চায়।’ তিনি রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

সংস্কার কমিশন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘কমিশন আমাদের সময় দেয়নি, আমাদের কথা শোনেনি। অথচ নারীদেরও অনেক কিছু বলার ছিল। কমিশন প্রধানের আচরণে আমরা হতাশ, বিশেষ করে যখন তাকে অন্য ঐকমত্য কমিশনে সক্রিয় দেখা যায়।’

তিনি জানান, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনসহ আরও পাঁচটি কমিশনের প্রধান যৌথভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে নারীদের বাদ দেওয়ার সমালোচনা করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তার কোনো উত্তর মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ প্লাজায় যখন ঘোষণা হলো, তখনই আমি সামাজিক মাধ্যমে সংসদ ভবনকে নারী বর্জনের জন্য সমালোচনা করি। এই সনদের প্রতি আমার কোনো সম্মান নেই—এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে ৪৮টি ভিন্ন বিষয়ে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত অবাস্তব। শিক্ষিত মানুষের পক্ষেও এতগুলো বিষয়ে আলাদাভাবে হ্যাঁ বা না বলা অসম্ভব। এটি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।’

শিরীন পারভিন হক আরও উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বহু নারী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সমতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়ছে। তাদের এই সংগ্রাম উপেক্ষা করা উচিত নয়।’

ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আন্দোলনে রোকেয়া হলের মেয়েরা গেট ভেঙে রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের উপস্থিতি কমে যাওয়া আমাদের জন্য বেদনার।’

সংসদীয় কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারিত ৩০০ আসন আজ আর যথেষ্ট নয়। তাই ৬০০ আসনের সংসদ গঠন এবং এর অর্ধেক (৩০০) সংরক্ষিত আসন নারীদের জন্য রাখলে নারী-পুরুষের ভারসাম্য নিশ্চিত হবে।’

তিনি স্বীকার করেন, ‘আমাদের প্রতিবেদন হয়তো বিতর্কের জন্ম দেবে, কিন্তু আমরা সত্য প্রকাশের জন্য সেই বিতর্ককে স্বাগত জানাই।

রাজনৈতিক আশার কথা উল্লেখ করে শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার গভীর আস্থা আছে। তারা সাহসী, পুরোনো ভয়কে জয় করেছে। আমার প্রত্যাশা—তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, বৈষম্য দূর করবে এবং মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করে একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে নেতৃত্ব দেবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর