Saturday 08 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিতর্কে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২৫ ০০:১৬ | আপডেট: ৯ নভেম্বর ২০২৫ ০১:১৯

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা কামরুজ্জামান কামরুল

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা থামছে না। কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ–সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হককে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই আলোচনায় অন্য নাম— কামরুজ্জামান কামরুল। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন, পোস্টার ও প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি। যা স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পাঁচ দফা জরিপ ও মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আনিসুল হকের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়। এসব জরিপের একটি সম্পন্ন হয় আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সহায়তায়, যেখানে বিবেচনা করা হয় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, আন্দোলনে ভূমিকা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু ফল ঘোষণার পর মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুজ্জামান কামরুল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বিএনপি ও সচেতন মহলের অভিযোগ, কামরুলের অনুসারীরা বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও অনলাইন পেজের মাধ্যমে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, কামরুলের অতীত নিয়েও প্রশ্ন তুলছে দলীয় মহল। অভিযোগ আছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নদী ইজারা বাণিজ্য ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুরের যাদুকাটা নদী, কয়লা ঘাট, বিআইডব্লিউটিএ জেটি ও জলমহাল থেকে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আদায় করতেন কামরুল। সাবেক ইজারাদার রতন মিয়ার কাছ থেকেও তিনি নাকি দৈনিক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন।

এমনকি বর্তমান ইজারাদারদের মাধ্যমেও বালু উত্তোলন ও বানিজ্যিক নৌকা থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে। একজন স্থানীয় প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আগে তিনি মোটরসাইকেলে ঘুরতেন, এখন কোটি টাকার গাড়িতে। মানুষ জানে, এই টাকার উৎস কোথায়।’

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কামরুল কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় আওয়ামী নেতা সেলিম মিয়া ও আজাদ আহমেদের সঙ্গে সমঝোতায় এসে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেলিম মিয়ার নামে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও কামরুলের প্রভাবে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

একজন বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কামরুল সাহেব শুধু বিতর্ক তৈরি করছেন। দলে বিভাজন ঘটানোই এখন তার মূল লক্ষ্য।’

রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি আলোচিত অভিযোগ— তিনি বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে টাকা দাবি করে আশ্বাস দিয়েছেন- ‘দল এখনও চূড়ান্তভাবে কাউকে নমিনেশন দেয়নি, আমি টাকা দিয়ে হলেও নিয়ে আসব।’  তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুনাব আলী, যুবদল নেতা আলী আহমদ, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন আহমদ, কামাল মিয়া, বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়া, সবুজ আলম, মোস্তাক আহমদ, আমিনুর রহমানসহ একাধিক নেতার কাছ থেকে তিনি অর্থ দাবি করছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, ১/১১ সময়েও কামরুলের বিরুদ্ধে দলীয় তহবিল আত্মসাৎ করে বিদেশে পালানোর অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ইতিমধ্যে ২৩৮ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, এবং বাকি আসনগুলোও ধাপে ধাপে চূড়ান্ত হচ্ছে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যে কোনও বিভ্রান্তিমূলক কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন- ‘মনোনয়ন বঞ্চিত কেউ যদি বিভ্রান্তি ছড়ায় বা দলের প্রার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, দল সেটি মোটেও সহ্য করবে না।’

সুনামগঞ্জ-১ আসনের এই পরিস্থিতি বিএনপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের একটি বড় পরীক্ষা হয়ে উঠেছে। একদিকে আনিসুল হকের ত্যাগ, সংগ্রাম ও জনপ্রিয়তায় দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, অন্যদিকে কামরুজ্জামান কামরুলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দল ও জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা বাড়ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘এই আসনে বিএনপির জয়ের জন্য দরকার ঐক্য, স্বচ্ছ নেতৃত্ব ও জনআস্থা। সেই মানদণ্ডে আনিসুল হকই দলের জন্য বেশি গ্রহণযোগ্য।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘সব অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি সবসময় দলের প্রতি অনুগত ছিলাম, আছি, থাকব।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর