ঢাকা: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে এবার ছায়াশক্তির সঙ্গে লড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, এই নির্বাচনি যুদ্ধ কিন্তু আট-দশটা নির্বাচনের মতো না। এবার আমরা ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছি— যে ছায়া আমাদের দ্বারাই প্রতিপালিত হয়ে এখন আমাদের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে উত্তরাঞ্চল ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের হাতে রক্ত লেগেছিল, সেই রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। তখন আমাদের মা-বোনদের ইজ্জতহানি হয়েছিল, সেটাও এখনো মুছে যায়নি। তাই আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী, আসন্ন নির্বাচনে হুঁশিয়ার থাকবেন।’
ধর্মীয় প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “গ্রামের এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাকে ভোট দেবেন? তিনি বললেন, যারা রসূলের পথে চলে তাদেরকেই। জানতে চাইলে বললেন, ‘জামায়াতে ইসলাম।’ তালিম দিয়ে মহিলাদের বোঝানো হচ্ছে, জামায়াতই একমাত্র দল যারা রাসুলের প্রদর্শিত পথে চলে। এটা সম্পূর্ণ মুনাফেকি— ধর্মকে বিক্রি করে, রাসুলকে বিক্রি করে সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। তাই সবাই সাবধান, চোখ-কান খোলা রাখবেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এবার ছায়াশক্তির সঙ্গে লড়তে হবে। সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলেই ৭ নভেম্বরের জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবসের চেতনা এবং শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বেঁচে থাকবে।’
১৯৭০ সালের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি এবং স্বাধীনতার ঘোষণার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ইকবাল হাসান মাহমুদ। তার দাবি, ২৫ মার্চের গণহত্যার পর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতিকে নতুন করে সাহস ও আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ ছিল আপসমূলক; সেখানে একদিকে হুমকি, অন্যদিকে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছিল। যদি সেদিনই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হতো, তাহলে খানদের সঙ্গে দুই সপ্তাহব্যাপী আলোচনার প্রয়োজন হতো না।’
জিয়াউর রহমানের ভূমিকা তুলে ধরে টুকু বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক সৈনিক, যিনি দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেন এবং মাত্র তিন বছরে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তার প্রবর্তিত মুক্তবাজার অর্থনীতি বাংলাদেশের শিল্পায়নের ভিত্তি গড়ে দেয়, যার ফলেই গার্মেন্টস রফতানি শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় নেওয়া একটি কৌশলগত সিদ্ধান্তেই রিয়াজ গার্মেন্টস প্রথম ১০ হাজার পণ্য রফতানি করে। সেই থেকেই গার্মেন্টস খাত ও জনশক্তি রফতানিই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি।’
৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব দিবস কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্জন্মেরও প্রতীক বলে উল্লেখ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মুন্নুর আহমেদ এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন।