চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো মন্দিরে কালীপ্রতিমার স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন মন্দিরে প্রবেশ করে চুরি করে, আরেক ভাই চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির চেষ্টা করছিল।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোড ও সাগরিকা বিটাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি চুরি করা কিছু স্বর্ণালঙ্কারও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার দুজন হলেন- আবুল হোসেন (২৬) ও আরমান হোসেন (৩১)। তাদের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায়। তবে তারা চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী লংকাপাড়া এলাকায় থাকেন।
এর আগে, শনিবার (৮ নভেম্বর) গভীর রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার সদরঘাট কালীমন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে মন্দিরের সেবায়েত পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পান। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই মন্দিরে কালীমূর্তির মাথায় থাকা প্রতিটি চার ভরি ওজনের একটি স্বর্ণ ও একটি রুপার মুকুট, এক জোড়া কানের দুল, দুই ভরি ওজনের লকেটসহ চেইন, চার ভরি ওজনের রুপার মুন্ডমালা, চার আনা ওজনের স্বর্ণের লকেট চুরি হয়। এ ছাড়া মন্দিরের দানবাক্স ভেঙ্গে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
নগরীর কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল করিম সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার দুই ভাইয়ের মধ্যে আরমান চুরি করতে মন্দিরে প্রবেশ করেছিল। মন্দিরের পেছনে সেবায়েতদের ঘরের টিনের চালের ওপর দিয়ে উঠে দুই বর্গফুটের ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশ করে। এরপর প্রতিমার অলঙ্কার ও দানবাক্স থেকে টাকা নিয়ে আবারও একই পথ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘মূলত মন্দিরের ভেন্টিলেটর ফাঁকা থাকার কারণে আরমান সেখানে প্রবেশ করতে পেরেছিল। চুরির আগে সে কয়েকবার মন্দিরে গিয়ে রেকি করে। পেছনের টিনের চালে উঠে কীভাবে মন্দিরে প্রবেশ করা যায়, সেটাও চারপাশে ঘুরে বুঝে নেয়। এরপর দুই ভাই পরিকল্পনা করে চুরি সংঘটিত করে। আরমান চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার তার ভাই আবুল হোসেনকে বিক্রির জন্য দেয়।’
এদিকে কালীমন্দিরে চুরির বিষয়টি রোববার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যায় পুলিশ প্রথমে নগরীর স্টেশন রোড থেকে আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে লকেটসহ একটি সোনার চেইন ও এক জোড়া কানের দুল উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে আরমানকে গ্রেফতার করা হয়।
দুই ভাই ‘পেশাদার চোর’ উল্লেখ করে ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘চুরি করা স্বর্ণালঙ্কারগুলো নিয়ে আবুল হোসেন দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় একটি দোকানে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাত নম্বর থেকে আমাদের ফোন করে তথ্যটি জানিয়ে দেন এক ব্যক্তি। আমরা দোকানটি শনাক্ত করে আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিই। একইসময়ে আবুল হোসেনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ক্রেতা সেজে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
‘কিন্তু সে বিষয়টি বুঝতে পেরে একেক সময় একেক স্থানে যেতে বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া শুরু করে। তবে একপর্যায়ে আমরা তাকে স্টেশন রোড থেকে ধরে ফেলি। তার কাছে চেইন ও কানের দুল পাওয়া যায়। পরে সে আমাদের আরমানের অবস্থানের তথ্য জানায়। তাকেও আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
মন্দির থেকে চুরি করা আরও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের চেষ্টায় অভিযান অব্যাহত আছে বলে ওসি জানিয়েছেন।