ঢাকা: নিকোটিন পাউচ কারখানা নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ) ও বাংলাদেশ অ্যান্টি টোব্যাকো অ্যালায়েন্স (বাটা)।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সংগঠনটির পক্ষে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী দাবি করেছেন, তিনি আইন মেনে ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেডকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও জনস্বার্থ বিরোধী। তার এই মন্তব্য জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষার নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিডা এই অনুমোদনের মাধ্যমে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে সংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিকোটিন পাউচের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সুস্পষ্ট সতর্কতা জারি করেছে। এটি অত্যন্ত আসক্তিকর, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। উল্লেখ্য, এই ধরণের পণ্য ক্ষতিকর কিনা তা নির্ধারণ করা বিডার দায়িত্ব নয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ও বিএসটিআই-এর মতো সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু অনুমোদন প্রদানের সময় বিডা-বেজা সুকৌশলে এসব সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গেছেন, যা সরকারি প্রশাসনিক নীতি ও সমন্বয় কাঠামোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বিডাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল ভেষজ ও দ্রব্য নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু নিকোটিন পাউচ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ও নেশাজাত পণ্য, সেহেতু এই নতুন নেশা পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন দিয়ে সেটি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সংবিধানের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, দেশে নতুন কোনো তামাক বা তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে অনুমোদন বা লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। বিডা ও বেজা কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে রাষ্ট্রের আইনভঙ্গ করেছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, বিডার চেয়ারম্যান দেশের যুব সমাজ এবং আগামী দিনে জনগনের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফিলিপ মরিসের কারখানা স্থাপনের অনুমোদন বাতিল করবেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে দেশের ৩৫টি মন্ত্রণালয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে যৌথ ঘোষণায় সই করেছে, যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বিডা সরকারের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান হয়েও এই ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সেই যৌথ ঘোষণার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে নিকোটিন পাউচের মতো ক্ষতিকর পণ্যের অনুমোদন দিয়েছে।