Monday 10 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তীব্র সংকটে তেহরান, দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাবে সুপেয় পানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১০ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৫ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের রাজধানী তেহরানের প্রধান খাবার পানির উৎস দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম।

সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরটির পানি সরবরাহকারী সংস্থার পরিচালক বেহজাদ পারসা বলেছেন, শহরের প্রধান জলাধার আমির কাবির বাঁধে বর্তমানে মাত্র ১৪ মিলিয়ন ( এক কোটি ৪০ লাখ) ঘনমিটার পানি আছে। এক বছর আগে সেখানে ৮৬ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ছিল। বর্তমান স্তরে এটি মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানকে পানি সরবরাহ করতে পারবে।‘

তেহরান প্রদেশ দীর্ঘমেয়াদী খরার কবলে পড়েছে, যা অঞ্চলটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পানি সংকটের মুখে ফেলেছে। অক্টোবর মাসে এক স্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত এক শতাব্দীর মধ্যে প্রায় নজিরবিহীন।’

বিজ্ঞাপন

দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, আগামী কয়েক মাসে যদি বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে তেহরানে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই পানীয় জলের সরবরাহ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

বিবিসি নিউজ পার্সিয়ানকে এক তেহরানবাসী বলেন, ‘পানির উৎপাদনের পরিমাণ এবং পানির চাপ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলো দ্রুত পানি শেষ হয়ে যায়, কিংবা একেবারেই পানি থাকে না।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে গরম গ্রীষ্মকালে যখন ব্যাপক বায়ু দূষণ থাকে। আর যদি বাড়িতে ছোট শিশু বা বৃদ্ধ কেউ থাকেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, কারণ কখনো কখনো তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই অবস্থায় থাকতে হয়।’

ইরানজুড়ে পানি সংকট এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনমনে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

রাজধানীর বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে খুজেস্তান এবং সিস্তান-বালুচিস্তানের গ্রাম পর্যন্ত, জীবনযাত্রা এমনভাবে ব্যাহত হচ্ছে যাকে অনেকেই বলছেন অসহনীয়।

টানা পাঁচ বছর শুষ্কতা এবং রেকর্ড তাপের পর, তেহরান পৌরসভার কলগুলো শুকিয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

জলাধারের পানির স্তর ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং মানুষের মেজাজ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।

‘ডে জিরো’

কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, যদি উল্লেখযোগ্যভাবে পানি ব্যবহারে কাটছাঁট না করা হয়, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর কিছু অংশ ‘ডে জিরো’র মুখোমুখি হতে পারে। অর্থাৎ, বাড়ির পানির কল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং পানি সরবরাহ করা হবে স্ট্যান্ডপাইপ বা ট্যাংকারের মাধ্যমে।

বছরের শুরুতেই তারা এই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন এবং নিয়মিত তা পুনরাবৃত্তি করে চলেছেন।

গ্রীষ্মের তীব্র তাপমাত্রা এবং ইরানের পুরাতন বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের পরে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক কাভেহ মাদানি বলেন, ‘এটি শুধু একটি পানি সংকট নয়, বরং ‘পানির দেউলিয়াত্ব’—এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে (পানি) এতটাই অতিরিক্তভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে ক্ষয়ক্ষতি আর পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।’

জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ কনভেনশন (ইউএনসিসিডি)-এর ড্যানিয়েল সেগাই বলেন, ইরান দেখিয়ে দিচ্ছে- যখন পানি সংকট, ভূমি অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থা একত্রিত হয় তখন কী ঘটে। এটি অন্যান্য দেশের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা।

সারাবাংলা/এইচআই