Monday 10 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যবসায়ী খুনের আসামি ধরতে গিয়ে মিলল পুলিশের লুট করা অস্ত্র-গুলি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ নভেম্বর ২০২৫ ২০:০৯ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪৪

লুট করা অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় বছরজুড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর ‘টার্গেট কিলিংয়ে’ জড়িত ছয়টি সন্ত্রাসী গ্রুপকে শনাক্ত করে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। অভিযানে পুলিশ রাউজান থাকা থেকে লুট হওয়া একটি চায়নিজ রাইফেল ও ৭ রাউন্ড ‍গুলিসহ আরও বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে।

এ ছাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে টানা অভিযানে মাসখানেক আগে রাউজান উপজেলার বিএনপি সমর্থক এক ব্যবসায়ীর হত্যাকারীদের ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে দুজনের তথ্যে সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাউজান থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আছে- ৪টি বিদেশি পিস্তল ও ১টি রিভলবার, ৪২টি রাইফেলের গুলি, ১টি চায়নিজ রাইফেল ও ৪৯ রাউন্ড চায়নিজ রাইফেলের গুলি, একটি শটগান ও ১৭ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ, ১৬ রাউন্ড ‘৭ পয়েন্ট ৬৫’ বোরের পিস্তলের গুলি, ৭টি খালি ম্যাগাজিন, ১টি রকেট ফ্লেয়ার ও ২টি রামদা। এ ছাড়া ৫০টি ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা এবং ৯৬ হাজার টাকাও জব্দ করে পুলিশ।

গ্রেফতার হওয়া ৬ জনের মধ্যে আবদুল্লাহ খোকন, মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মুহাম্মদ মারুফ ও মুহাম্মদ সাকলাইন নামে চারজনকে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেসময় তাদের কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি এলজি উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের তথ্যে রোববার রাতে মো. সাকিব ও মো. শাহেদ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাকিব ও শাহেদের তথ্যে সোমবার দুপুরে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বাজারসংলগ্ন আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির পেছনের পুকুর সেচে একটি চায়নিজ রাইফেল, একটি শটগান ও সাতটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

‘একটি চায়নিজ রাইফেল ও চায়নিজ রাইফেলের ৭ রাউন্ড গুলি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাউজান থানা থেকে লুট করা হয়েছিল বলে সাকিব ও শাহেদ স্বীকার করেছে। শটগানটিও থানা থেকে লুট হয়েছিল বলে আমাদের ধারণা। তবে সেটা আরও যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।’

গত ৭ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাউজান সীমান্তবর্তী হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে প্রাইভেট কার আটকে গুলি চালিয়ে মো. আব্দুল হাকিম (৬০) নামে একজনকে খুন করা হয়। তার বাড়ি রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাচখাইন গ্রামে। নিজ বাড়িতে হামিম এগ্রো নামে একটি গরুর খামাার পরিচালনা করতেন তিনি।

নিহত আব্দুল হাকিম রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের পর গিয়াস কাদের সারাবাংলাকে জানান, আব্দুল হাকিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তবে সমর্থক ছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জানাতে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু। তিনি জানান, তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পাঁচজন সরাসরি ‘কিলিং মিশনে’ ছিলেন। একজন মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ি অনুসরণ করেন এবং কয়েকজন মদুনাঘাট সেতুর অন্যপ্রান্তে অবস্থান নিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেন।

এসপি জানান, আবদুল হাকিম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ৩১ অক্টোবর রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া থেকে আব্দুল্লাহ খোকন ওরফে ল্যাংড়া খোকনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ব্যবসায়ী হাকিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যে ২ নভেম্বর রাউজানের নোয়াপাড়া থেকে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে মারুফ নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। মারুফ জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য দেয় এবং সেটি সাকলায়েন নামে একজনের কাছে আছে বলে জানান।

‘রিমান্ডে সাকলায়েন, মারুফের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে রোববার রাতে নোয়াপাড়া চৌধুরীহাট এলাকায় আইয়ুব আলী সওদাগর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে রাতে চারটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর আরও অস্ত্রের সন্ধানে সেখানে একটি পুকুরে সেচ করে পুলিশের কাছ থেকে লুট করা একটি চায়নিজ রাইফেল ও শটগান উদ্ধার করা হয়।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চারটি বিদেশি পিস্তল যেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো ব্যবসায়ী হাকিম হত্যাকাণ্ডের সময় সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করেছিল। তবে থানা থেকে লুট করা কোনো অস্ত্র হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল কী না, সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাউজান উপজেলায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে রাউজানে খুন হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এর মধ্যে ১২ জনই খুন হয়েছেন বিএনপির দুই গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্বে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার তথ্য দিয়েছেন, রাউজানে ছয়টি গ্রুপ ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য তারা পেয়েছেন। ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম খুনে এর মধ্যে একটি গ্রুপ জড়িত ছিল।

তিনি বলেন, ‘রাউজানে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সাতটি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হয়েছে। অন্য হত্যাকাণ্ডগুলো পারিবারিক, পরকীয়া, মাদকের কারণে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর