ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে স্বাধীন মূল্যায়নে ঢাকায় আসা জাতিসংঘের মিশন, ইউএন-ওএইচআরএলএলএস এর সঙ্গে পোশাক খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এক কৌশলগত পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউজে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান পোশাক শিল্পের পক্ষ থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উত্তরণ-পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও সহায়তার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি সহযোগিতামূলক নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএ’র পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির এবং বিজিএমই’র সাবেক পরিচালক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এফটিএ অ্যান্ড পিটিএ এর চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।
আলোচনাকালে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একযোগে ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় এবং অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছে। বিশেষত, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল সমযকালে গ্যাসের মূল্য ২৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং এপ্রিল ২০২৫-এ ক্যাপটিভ ও শিল্প খাতে যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এর মতো উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদন সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক চাপ। খেলাপি ঋণ ২৭ শতাংশ এর ওপর বৃদ্ধি এবং ব্যাংক সুদের হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া বেসরকারি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে।’
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘লজিস্টিকস ক্ষেত্রেও রফতানিকারকরা তীব্র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। বন্দর কার্যক্রমে অস্বাভাবিক বিলম্ব ও অদক্ষতা থাকা স্বত্ত্বেও অক্টোবর ২০২৫ এ একধাপে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সড়কপথে পরিবহণে দীর্ঘ সময় ব্যয় শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৩ সালে ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, ২০২৪ সালে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশ করা এবং বিকল্প কোনো সহায়তার ব্যবস্থা না রেখেই ৬০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা হ্রাস রফতানিমুখী এই খাতটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, শিল্পকে এক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি দেশের অর্থনীতির প্রধান দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করেন, যার মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির মন্থরতা, এখন পর্যন্ত ৮ শতাংশ এর ওপরে মুদ্রাস্ফীতি বজায় থাকা, কম কর-জিডিপি অনুপাত (৬.৬ শতাংশ) এবং ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বৈঠকে পোশাক রফতানিকারকরা একটি স্থিতিশীল ও সুচারু উত্তরণ নিশ্চিত করতে সরকার এবং উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট স্বল্প ও মধ্য-মেয়াদি অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশ পেশ করেন।
সভায় বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সফল উত্তরণের পর সকল উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে কমপক্ষে তিন বছরের একটি মসৃণ ট্রানজিশন পিরিয়ড নিশ্চিত করা অপরিহার্য। একইসঙ্গে, শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য স্বল্প সুদের বা মিশ্র অর্থায়ন (ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স) এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।