চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে হাসপাতাল থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে তুলে নিয়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিন যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, হাসপাতালের ভেতর ঢুকে ‘মব তৈরি করে’ ওই যুবককে তুলে নিয়ে যায় একদল যুবক। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে নগরীর পাঁচলাইশে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঘটনার শিকার ফয়সাল মাহমুদের (৩০) বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মনোহরগঞ্জ উপজেলার সভাপতি ছিলেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করেন এবং হেলথ কেয়ার নামে একটি ওষুধ কোম্পানিতে ‘মার্কেটিং সেলস অফিসার’ হিসেবে চাকরি করেন।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- আশরাফুল আমিন (২৯), তারিক আসিফ (২৭) ও শাহাদাত হোসেন শান্ত (২০)।
পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফয়সাল মাহমুদ একসময় ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ফয়সাল পার্কভিউ হাসপাতালে ডক্টর ভিজিটে গিয়েছিলেন। সেখানে ১০-১২ জন যুবক ঢুকে তাকে মারধর করে পরিকল্পিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করি। অভিযানের মুখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করি।’
ফয়সাল মাহমুদকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্বদাতা যুবক নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন বলে জানান ওসি। এ ঘটনায় ফয়সালের বাবা জসিম উদ্দিন পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ জানায়, রোববার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকের কাছে সাক্ষাতের জন্য গিয়ে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় গ্রেফতার তিনজন এবং পলাতক
আবুল সাজ্জাদ আদর ও আমিমুল এহসান ফাহিমসহ ১০-১২ জন ঢুকে ফয়সালকে ‘ছাত্রলীগ, স্বৈরাচারের দোসর’ বলে কিল-ঘুষি মারা শুরু করে। সেখানে তখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শত-শত লোক জড়ো হয়ে যায়।
উপস্থিত লোকজনের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি করে ওই যুবকরা ফয়সালকে জোরপূর্বক টেনে-হিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে বের করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
ওসি সোলাইমান বলেন, ‘ফয়সালকে প্রথমে রাউজান উপজেলার গহিরায় একটি পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে মারধর করে। হত্যার হুমকি দিয়ে তার কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা কেড়ে নেয়। রাতভর ওই ভবনে আটকে রেখে নির্যাতন করে।’
‘এরপর আজ (সোমবার) সকাল ৯টার দিকে রাউজানে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথে নিয়ে ফয়সালের ডেবিট কার্ড দিয়ে ১৮ হাজার টাকা তুলে নেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে এসে স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের বুথ থেকে তার ডেবিট কার্ড দিয়ে দুই ধাপে আরও ৪০ হাজার টাকা তুলে নেয়।’
এরপর বেলা ১২টার দিকে তাকে নগরীর চকবাজারে প্যারেড কর্নারে এনে ছেড়ে দেয়। অভিযানে থাকা পুলিশ ফয়সালকে থানায় নিয়ে যায়। এর পর বিকেলে নগরীর কাতালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান।