ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মতোই দক্ষিণ এশিয়ার আকাশেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে ধোঁয়া ও ধূলিকণার বিষাক্ত ছায়া। ভারতের দিল্লি ভয়াবহ বায়ুদূষণে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরে পরিণত হয়েছে, আর এরই ধাক্কায় ঢাকাও আবার ফিরে গেছে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায়।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ২২২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এ স্কোর ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
একই সময়ে ৭৭৮ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। বায়ুতে ঘন ধোঁয়া ও দহনজাত কণার পরিমাণ সেখানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের লাহোরের স্কোর ৪৮০, তৃতীয় অবস্থানে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দ (২৩১) এবং পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২০৩)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং নির্মাণকাজ, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্প বর্জ্য বৃদ্ধির কারণে ঢাকার বাতাস দ্রুত নোংরা হয়ে পড়ছে। কয়েকদিন আগে কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত মিললেও এখন রাজধানীর বাতাস পুনরায় বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একিউআই মান কী বোঝায়:
০–৫০: ভালো
৫১–১০০: মাঝারি
১০১–১৫০: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর
১৫১–২০০: অস্বাস্থ্যকর
২০১–৩০০: খুব অস্বাস্থ্যকর
৩০১–৪০০: ঝুঁকিপূর্ণ
ঢাকা বর্তমানে যে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে রয়েছে, তাতে শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই অবস্থায় অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়া, মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
পরিবেশবিদরা বলছেন, দ্রুত নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ না নিলে শীত মৌসুমে ঢাকার বায়ু আরও বিষাক্ত হয়ে উঠবে। এর প্রভাব শুধু শ্বাসযন্ত্র নয়, হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যানসারসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দিতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, “ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ এখন এক ধরনের ‘নীরব মহামারী’। নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের ধোঁয়া কমানো এবং শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি ক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
বিশ্বজুড়ে যখন শহরগুলো দূষণ রোধে প্রযুক্তিনির্ভর নীতি নিচ্ছে, তখন ঢাকার বাস্তবতা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নেওয়াটাই নিরাপদ রাখা।