লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীতে যুবদল নেতা হেলাল উদ্দিনের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে নির্বিচারে মৎস্য নিধন। তার মদদে অবৈধ ‘খচ্ছি জাল’ ব্যবহারে প্রতিদিন মণকে মণ ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা পড়ছে। এর মারাত্নক প্রভাব পড়ছে নদীর জীববৈচিত্র্যের ওপরও।
অভিযোগ উঠেছে, ওই যুবদল নেতার মদদপুষ্ট একটি জেলে বাহিনী রয়েছে। তারা নদীতে বিশেষ কায়দায় জোয়ার-ভাটার গতিপথে ‘খচ্ছি জাল’ পেতে রেখেছে। এই অবৈধ জালে মৎস্য সম্পদ নির্বিচারে নিধন চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই চক্রের মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে, দেখা দেবে মাছের সংকট। এতে হুমকির মুখে পড়বে ইলিশের এই অভয়াশ্রমসহ মৎস্য খাত।
অভিযুক্ত হেলাল সাহেবের হাট ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য। মাছঘাট দখল ও চাঁদাবাজির কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে রহস্যজনকভাবে তিনি আবার স্বপদে ফিরে এসেছেন। আর দলে ফেরার পর থেকেই তিনি আরও বেপরোয়াভাবে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবদল নেতা মোটা অংকের টাকায় বিভিন্ন টেবিল ম্যানেজ করেই এসব করেছেন।
সরেজমিন মেঘনা নদীতে গিয়ে দেখা যায় এক ভয়াবহ চিত্র। মাতাব্বর হাটসহ আশেপাশে জেগে ওঠা চরে পাতানো হয়েছে অবৈধ ‘খচ্ছি জালের ফাঁদ’। যতদূর চোখ যায়, কেবল খুঁটি আর জালে ঘেরা সেই দৃশ্য। বিস্তীর্ণ চরের চারপাশে মাটিতে পোঁতা হয়েছে শত শত খুঁটি, যার সঙ্গে বাঁধা রয়েছে মশারি জালের মতো বিশেষ জাল।
জোয়ারের সময় এই ফাঁদ পাতা জাল ডুবে যায়। কিন্তু ভাটা শুরু হতেই যখন চরের পানি নেমে যেতে থাকে, তখন জালগুলোতে আটকা পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ সময় মণকে মণ মাছের পোনা ও জলজ উদ্ভিদ নির্বিচারে ধ্বংস হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, মেঘনা বুকে জেগে উঠা প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার চর জুড়ে এই অবৈধ জালের ব্যবহার। দিনদিন বাড়ছে ফাঁদ
মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, এই ফাঁদে যে পরিমাণ মাছ আটকা পড়ে, তার মধ্যে বড় ও মাঝারি আকারের মাছ জেলেরা সংগ্রহ করে নেয়। কিন্তু বাকি মাছের পোনাগুলো চরের কাদামাটিতে আটকা পড়ে সেখানেই ধ্বংস হচ্ছে।
সচেতন মহল অবিলম্বে এই বিশেষ ফাঁদ বা ‘খচ্ছি জাল’ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে, অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
কমলনগরের মেঘনা নদী ইলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়াশ্রম। এখানেই মা ইলিশ ডিম ছাড়ে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেড়ে ওঠার আগেই ‘খচ্ছি জালের’ ফাঁদে আটকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ইলিশের সেই পোনাগুলো। এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে সরকারের ‘মা ইলিশ রক্ষা’ এবং ‘জাটকা রক্ষা অভিযান’ কোনোভাবেই সফল হবে না। দিনি দিন ইলিশসহ মাছের উৎপাদন কমতে থাকবে।
সাধারণ জেলেরা বলছেন, ‘নেতারা দলের ও গায়ের জোরে নদীতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ মারছে। আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছি না। প্রতিবাদ করলে বিপদ।’
অবৈধ জালে মাছ ধ্বংসের অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যুবদল নেতা হেলাল মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। বরং তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে একজন কথা বলবেন।’
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম। এসেই বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়েছি। এরই মধ্যে জালের বেশ কিছু খুঁটি অপসারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও অভিযান দিয়ে পুরোটা অপসারণ করা হবে।