Tuesday 11 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জবি ছাত্রদলের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১২

জবি করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৩ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৫২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী ও এক শিক্ষক আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের অনুসারী গ্রুপ এবং সুমন সরদার গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন-মার্কেটিং বিভাগের সামিউদ্দিন সাজিদ, আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম, জনি, জাহিদ, আশরাফুল; রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী ও বাংলা বিভাগের ছাব্বীরসহ অনেকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. নঈম সিদ্দিকীও এসময় আহত হন।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবার সকালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আস-সুন্নাহ পরিবহনের বাসে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ ও তার বন্ধুরা গল্প করছিলেন। তখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদী তাদের কথা বলতে নিষেধ করেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমাকে দ্বিতীয় গেটে ঝুলিয়ে রাখব।’ পরে সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট ও হলে গিয়েও সাজিদের খোঁজ নেন।

মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় গেটের সামনে সাজিদ দাঁড়িয়ে থাকলে সাদী ও তার সহযোগিরা গিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। সাজিদকে বাঁচাতে গেলে আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম ও জাহিদও মারধরের শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিনিয়র নেতারা বাধা দিলেও হামলাকারীরা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি।

প্রথম দফার সংঘর্ষের পর শান্ত চত্বরে ফের দ্বিতীয় দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে চেয়ার ছুড়ে মারার সময় আল-আমিনের মুখে গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন এবং আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন।

পরিস্থিতি শান্ত করতে ড. রইছ উদ্দিনের কক্ষে সালিশ বসানো হয়। তবে সালিশ চলাকালেই তৃতীয় দফায় আবারও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিক্ষক নঈম সিদ্দিকীসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন, ভাঙচুর হয় রইছ স্যারের কক্ষের জানালা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাজিদ দ্বিতীয় গেটের সামনে এক নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় পেছন থেকে সাদীর অনুসারীরা এসে তাকে আঘাত করতে শুরু করেন। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা ঠেকাতে গেলে তাদের সামনেই পিটুনি চলে। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. নঈম আক্তার সিদ্দিকী, ফেরদৌস হোসেন ও মাহাদী হাসান জুয়েলসহ কয়েকজন শিক্ষকও আহত হন।

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার দাবি করেছেন, ‘আস-সুন্নাহ হলের বাসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এতে কোনো রাজনৈতিক বিষয় জড়িত নয়।’

তবে ছাত্রদলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলছেন, ‘এটি নিছক বিভাগের ঘটনা নয়, বরং সংগঠনের ভেতরের প্রভাব-প্রতিপত্তির লড়াইয়ের ফল।’

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন, ‘গতকাল সকালে আস-সুন্নাহ বাসে কথা বলছিলাম। সাদী এসে ধমক দিয়ে বলে—তোরে সেকেন্ড গেটে ঝুলিয়ে রাখব। আজকে ১৫-২০ জন নিয়ে এসে আমার, আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিমদের ওপর হামলা করে। গতকাল হলে গিয়েও আমার খোঁজ নিয়েছে।’

আহত শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, ‘চেয়ার দিয়ে এমনভাবে মুখে আঘাত করেছে যে মুখ ফুলে গেছে, চেয়ারটাই ভেঙে গেছে।’

‎এ বিষয়ে জবি ছাত্রদল দাবি করেছে, ঘটনাটিতে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আসসুন্নাহ হলের দুই শিক্ষার্থী বাসে করে আসার পথে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে তা দুই বিভাগের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের নেতারা কেবল ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকায় সমাধানের উদ্যোগে এগিয়ে যান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুই বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে তা বড় আকার ধারণ করে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর