চট্টগ্রাম ব্যুরো: অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে দেখামাত্র গুলি করে (ব্রাস্টফায়ার) হত্যার নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেছেন, আমার এ নির্দেশনা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সিএমপির সব থানা-ফাঁড়িতে দায়িত্বরতসহ সকল পুলিশ সদস্যদের বেতার (অয়্যারলেস) বার্তায় কমিশনার মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি প্রচারে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এছাড়া তার সঙ্গে প্রচারণায় থাকা বিএনপি কর্মী সরোয়ার হোসেন বাবলা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার পর সিএমপি কমিশনার জানিয়েছিলেন, গুলিবর্ষণকারীদের টার্গেট এরশাদ উল্লাহ ছিলেন না, মূলত সরোয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের নির্দেশে তার বাহিনীর একসময়ের সদস্য সরোয়ারকে খুন করা হয়েছে। দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়া এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যদের জন্য সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের ‘সরাসরি গুলি করে হত্যার’ বার্তা এলো।
জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একান্তই ওয়্যারলেস সেটে আমার সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া গোপন বার্তা। এটা আপনি কীভাবে জানলেন আমি জানি না। হয়তো আমাদের কোনো সদস্য এটা ফাঁস করে দিয়েছেন। যিনি এ কাজ করেছেন, যিনি এ তথ্য দিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আইন অমান্য করেছেন এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।’
তবে নির্দেশনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আমার সদস্যদের এ ধরনের একটা নির্দেশনা দিয়েছি। আপনারা জানেন, ২০২৪ সালের ৬, ৭ ও ৮ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের অস্ত্র লুট হয়েছে। ফলে অনেক অস্ত্র বাইরে চলে গেছে। এসব অস্ত্র যে সন্ত্রাসীদের কাছে যায়নি, কিংবা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না, সেটা আমরা নিশ্চিত নয়। কিছুদিন আগে নির্বাচনি গণসংযোগে যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে যে অটোমেটিক পিস্তল ব্যবহার হয়েছে, সেটাও পুলিশের অস্ত্র হতে পারে। আমরা যদি অস্ত্রটা উদ্ধার করতে পারতাম, তাহলে বোঝা যেত সেটা আমাদের কী-না।’
‘এ প্রেক্ষাপটে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যে, যে বা যারা অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হবে তাকে যেন গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এটা দণ্ডবিধির ৭৫, ৭৬, ৯৬ থেকে ১০৬ ধারায় উল্লেখ আছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি দণ্ডবিধি অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দণ্ডবিধিতে আমাকে আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে গুলি করবে, তাকে পালটা গুলি করে হত্যার অধিকার আমার আছে। একজন আইন মান্যকারী সুনাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার আমার আছে।’
সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘আগেও এটা (নির্দেশনা) ছিল, এখন আবারও দেওয়া হয়েছে। পার্থক্যটা হচ্ছে, আগে ছিল সিঙ্গেল রাউন্ড ফায়ার, এবার হবে ব্রাস্টফায়ার। অনেকে ভাববেন ব্রাশফায়ার, আসলে এটা হবে ব্রাস্টফায়ার। একসঙ্গে একাধিক গুলি বের হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই নির্দেশনা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সাম্প্রতিক সময়ে শহরে পুলিশের টহল, চেকপোস্ট অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সিএমপির সকল সদস্য এই নির্দেশনা সুন্দরভাবে প্রতিপালন করবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত আগস্টে সিএমপি কমিশনার একইভাবে বেতার বার্তায় পুলিশের কোনো টহল দলের সামনে কিংবা অভিযানের সময় কেউ অস্ত্র বের করলে আত্মরক্ষায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।