Tuesday 11 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের প্রশ্ন ও শঙ্কা
তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে ‘জটিলতা’ কাটছেই না!

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:২৪ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:২৮

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী আসছে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই প্রেক্ষিতে ইসি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনি তফসিল। আর এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে ভোটের মাঠে নেমেছে। কিছু কিছু দল নির্বাচনের জন্য অনানু্ষ্ঠানিক মনোনয়ন দিলেও বাংলাদেশের বৃহত্তম দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি দলটির নেতারা ব্যস্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েও।

এদিকে আসনগুলোতে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই ভোটের মাঠে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। যদিও কিছু জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কিন্তু সেটা আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। বিএনপির এখন চিন্তার বিষয়, মাঠে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা। এই হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, যদি সবকিছু উপেক্ষা করে তারেক রহমান দেশে ফেরেনও, তার এই প্রত্যাবর্তন কি নিরাপদ হবে?

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গিয়ে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন দলটির এককর্মী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহ নিজেও। এ ঘটনা তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও তার নিরাপত্তার ওপর এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন সেঁটে দিয়েছে। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, ‘তারেক রহমান নিশ্চয়ই ফিরবেন।’ কিন্তু মাঠে-মহলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তিনি কি ফিরতে পারবেন— নিরাপদ, নির্ভয়ে? নাকি রাজনৈতিক বাস্তবতা ফের সময়সূচি পালটে দেবে?

প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা ও বিএনপির প্রস্তুতি

সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর নিশ্চিত করেছেন যে, তারেক রহমান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দেশে ফিরছেন। এ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি অঙ্গনে উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। দলের সবপর্যায়েই তার জন্য প্রস্তুতি চলছে। প্রায় ১৬ বছর তিনি জনগণের থেকে দূরে থাকলেও, ডিজিটাল মাধ্যমে তিনি সবসময় যুক্ত ছিলেন। এখন সরাসরি সামনে আসা— এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, এক ধরনের আবেগও।’

বারবার সময়সূচি পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তা

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথা চলছে। কিন্তু মামলা, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও তার ‍নিরাপত্তা প্রশ্নে সেই সময় বারবার পিছিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত এক মাসেই তার ফেরার সময় অন্তত তিনবার পরিবর্তিত হয়। আগে শোনা গিয়েছিল, ওমরাহ পালন শেষে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন। চট্টগ্রামের -৮ আসনের ঘটনার পরে ফের সময় পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়ে দলের কিছু সূত্র বলছে, ‘নিরাপত্তা বিবেচনায় সফর ফের পেছানো হয়েছে।’

আর নতুন করে এখন বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের মন্তব্য শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, লন্ডনে থাকা তারেক রহমান এখনই দেশে ফিরলে ‘আইনি জটিলতায়’ পড়তে পারেন। আবার কেউ মনে করছেন, তিনি আসবেন ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসার ঠিক আগে’— যাতে নির্বাচনি মাঠে নাটকীয় প্রভাব তৈরি হয়। আবার এও শোনা যাচ্ছে, ‘তিনি অনলাইনেই লন্ডন থেকে ভোট দেবেন।’

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

যখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময় নিয়ে চলছে আলোচনা, ঠিক তখনই চট্টগ্রামে নির্বাচনি জনসংযোগে ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। দুর্বৃত্তের হামলায় একজন নিহতের পাশাপাশি প্রার্থীও গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাটি স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে- ‘এই পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা কতটা নিরাপদ?’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক সারাবাংলাকে বলেছেন, ‘এই ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নতুন নয়। তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, সেজন্যই এগুলো ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু তিনি ভীত নন। আমাদের দলও এতে ভীত নয়। এ দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সময় মতোই দেশে ফিরবেন। তিনি নির্বাচন করবেন এবং জনগণের পাশে থাকবেন।’

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাগুলো ‘বড় রাজনৈতিক বার্তা’ বহন করে— যেখানে নিরাপত্তা ইস্যুটি ক্রমেই কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। অনেকে মনে করছেন, তারেক রহমান এই মুহূর্তে ‘নির্বাচনের আগের বড় কার্ড’— যা দলের মনোবল বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও হয়তো দেখছে, এই ফেরা কীভাবে সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা বলছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বিষয়টিকে বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখছেন। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘দেশ এখন নিরাপদ, তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন দেশে আসতেই পারেন। যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আর বিএনপি একটি বড় দল। এরই মধ্যে দলটি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। আমি মনে করি, সরকার তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে।’

চট্টগ্রামে গুলিতে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেই। কিন্তু দল ও দেশের স্বার্থে তারেক রহমান দেশে ফেরার কথা ভাবতেই পারেন।’

শিক্ষাবিদ, লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. রমিত আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। আদালতের রায় ছিলেন দণ্ডিত। তাই দেশে ফিরলে তিনি কারাবন্দি হবেন— এমন আইনি জটিলতা ছিল। কিন্তু গতবছরের ৫ আগস্টের পর নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। তিনি সব মামলায় খালাস পেয়েছেন। তাই তার দেশে ফেরা উচিত। আর আমাদের উচিত, তারেক রহমানকে নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রাখা।’

তার ভাষায়, “নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য একদিকে ‘মনস্তাত্ত্বিক শক্তি’, অন্যদিকে সরকার ও প্রশাসনের জন্য ‘স্থিতিশীলতার পরীক্ষা’। কিন্তু বাস্তবতা হলো— তারেক রহমানের ফেরা শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কৌশলগত পদক্ষেপ। কারণ, তিনি ফিরলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরেকবার উজ্জীবিত হবে। তবে তার ফেরা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ইস্যু নতুন করে আলোচনায় আসবে। আর এই সময় নির্বাচনি মাঠে তার উপস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে।’’

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের অনুপস্থিতির পর তারেক রহমান যদি সত্যিই দেশে ফেরেন তবে এটি নিঃসন্দেহে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় উন্মোচিত করবে। বিএনপির কর্মীদের কাছে এটি হবে একপ্রকার পুনর্জাগরণ। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি, আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মেঘ সরাতে হবে সেই প্রত্যাবর্তনের আগে।

বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর