ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সহায়তা হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া পক্ষ থেকে ২০ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন নতুন চাল অনুদান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) চট্টগ্রামের আলংকারে ডব্লিউএফপি গুদামে এক হস্তান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত ইয়াং সিক পার্ক এবং ডব্লিউএফপি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এটি কোরিয়ার পক্ষ থেকে দ্বিতীয় চাল অনুদান। এবারের অনুদানের পরিমাণ ২০ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন, যা কোরিয়ার কৃষি, খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল অনুদান দেওয়া হয়েছিল রোহিঙ্গা ত্রাণ কার্যক্রমে।
চালের পাশাপাশি এবার এমএএফআরএ পুষ্টিসমৃদ্ধ ফোর্টিফাইড চালের দানাও দেওয়া হয়েছে, যাতে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, জিঙ্ক, আয়রন এবং ফলিক এসিডসহ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এসব দানা স্থানীয়ভাবে সাধারণ চালের সঙ্গে ১:১০০ অনুপাতে মিশিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য পাঠানো হবে।
এ অনুদান প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার দুই মাসের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এটি ডব্লিউএফপি’র ১৭টি দেশে ১ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল অনুদানের বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সহায়তায় কোরিয়া আমাদের দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য অংশীদার। বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা ক্রমে কমে এলেও প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে—এমন সময়ে এই অনুদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় অংশ নিতে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয়াং সিক পার্ক বলেন, ‘আমরা ডব্লিউএফপি’র জীবনরক্ষামূলক কাজের অংশ হতে পেরে গর্বিত। একসময় কোরিয়া ডব্লিউএফপি’র সর্ববৃহৎ সহায়তা গ্রহণকারী দেশগুলোর একটি ছিল। আজ আমরা গর্বের সঙ্গে অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছি– সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে। বাংলাদেশ সরকার ও ডব্লিউএফপি’র সঙ্গে মিলে আমরা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কাজ চালিয়ে যাব।’
ডব্লিউএফপি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি বলেন, ‘কোরিয়ার জনগণের এই উদার অনুদান তাদের সহমর্মিতা ও মানবতার অনন্য উদাহরণ। যারা একসময় সহায়তা পেতেন, আজ তারা সহায়তা দিচ্ছেন– এটি সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। বাংলাদেশের জনগণের আতিথেয়তা ও মানবিকতা প্রশংসনীয়। আমরা উভয় সম্প্রদায়ের পাশে আছি, তবে রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে আরও সহায়তা প্রয়োজন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইং-এর পরিচালক মোর্শেদুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশে কোরিয়ার স্থিতিশীল অংশীদারিত্ব আমরা গভীরভাবে মূল্যায়ন করি। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন লক্ষ্যকে ভিত্তি করে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে বন্ধন জোরদার করছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ও কূটনৈতিক সহায়তার জন্য কোরিয়ার প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’