ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ। এ উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ১২টি দলের প্রধানের কাছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে দলগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই সংলাপে অংশ নেবে কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলো। ১৩ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া এই সংলাপ চলবে পুরো নভেম্বর জুড়ে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসছে সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটের কোনো দলকে ডাকা হবে কি না।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেছেন, ‘১৩ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। এ নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি। কারা আসবে, কাদের আগে ডাকা হবে সেগুলো ঠিক করতে হবে।’ জাতীয় পার্টিকে সংলাপে ডাকা হবে কি না? জানতে চাইলে ‘বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে’ ইসি সচিব বলেন, ‘কাদের ডাকব এখনো ঠিক করিনি। আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। ধাপে ধাপে জানতে পারবেন।’
তবে জাপার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিবন্ধিত দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও সংলাপের সম্ভাবনা রয়েছে।’ তবে এখনো যেহেতু তালিকা সম্পূর্ণ হয়নি, তাই তিনি এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। সেজন্য বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেলো।
গতবছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। এদিকে গণঅভ্যুত্থানের দিন জাপার চেয়ারম্যান ক্যান্টনমেন্টে ডাক পেলেও পরে অবস্থা পালটাতে থাকে। ফ্যাসিস্টের সহযোগী ‘তকমা’ দিয়ে সরকারি সব আলোচনা ও বৈঠক থেকে দূরে রাখা হয় জাপাকে। এমনকি এক পর্যায়ে এসে তাদেরও নিষিদ্ধের দাবি জানায় কয়েকটি দল। এরই মধ্যে জাপা ও ১৪ দলের শরিকদের সংলাপে না ডাকার দাবি জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়ে গণঅধিকার পরিষদ। ফলে ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো আমন্ত্রণ পায় কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
আবার অপরদিকে, জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ঘিরে গত অগাস্টে দলে আরেক দফা ভাঙন হয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার নেতৃত্বাধীন অংশ নির্বাচন কমিশনে মূল জাপা দাবি করে চিঠিও দেয় ইসিতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ইসির কাছে করা জাতীয় পার্টির কয়েকটি অংশের আবেদনও নিষ্পত্তি করেনি সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছাড়া অন্য কাউকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করেছি। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র অধিকারী জিএম কাদের। এর কোনো বিকল্প বা ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ীও অন্য কারও কোনো সুযোগ নেই।’ ইসির সংলাপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সংলাপের জন্য এখনো ডাক পাইনি। তবে যাওয়ার আগ্রহ আছে।
এদিকে সংলাপে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের নিবন্ধিত কোনো দলকে বাদ দিলে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম। আর এ কারণেই কোনো দলকে বাদ না দিয়ে, সব নিবন্ধিত দলকেই সংলাপে ডাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৩টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। এছাড়া পিডিপি, ফ্রিডম পার্টি ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে। এর বাইরে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাসী)-এর দলের নিবন্ধন চূড়ান্তে বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। আপত্তি না থাকলে ১২ নভেম্বরের পর সনদ পাবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ১৩ তারিখে প্রথম দফায় সংলাপ শুরু করছে। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে ১৬ নভেম্বর। সেদিন সকালে ছয়টি ও দুপুরে ছয়টি করে মোট ১২টি রাজনৈতিক দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। কমিশন বলছে, এ মাস জুড়েই সংলাপ চলবে। কমিশন চায় নভেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করতে। অপরদিকে জানা গেছে, মাসের শেষের দিকে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, ইসি গত সেপ্টেম্বরে শুরু করে শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, বিশিষ্টজন, নারী নেত্রীসহ নানা অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বৈঠক ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করেছে। সবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।