খুলনা: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার যৌথ গবেষণা সম্প্রসারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশে প্রথমবারের মতো কোলাবরেটিভ রিসার্চ গ্রান্ট প্রোগ্রাম (সিআরজিপি) চালু করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সিআরজিপি প্রোগ্রামে ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রিসার্চ গ্রান্ট প্রোগ্রাম (আরজিপি)-এর আওতায় ৩৯টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
প্রধান অতিথি হিসেবে বরাদ্দকৃত অর্থের চেক বিতরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম।
এসময় তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণার মাধ্যমেই সমাজ, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন সম্ভব। আজকের এই কোলাবরেটিভ রিসার্চে বরাদ্দের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার যৌথ গবেষণার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। গবেষণার ফলাফলকে প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণে ইমপ্যাক্টফুল করে তুলতে ইন্ড্রাস্ট্রি-একাডেমিয়ার যৌথ গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, গবেষণার ফল যেন বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হয় এবং মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবনের উন্নয়নে গবেষকদের সৃজনশীল ভূমিকা রাখতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একাডেমিক উৎকর্ষ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধ গবেষণার ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক হতে চায়।
উপাচার্য বলেন, আন্ডারগ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে প্রতিবছর বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের গবেষণা প্রকাশনায় প্রণোদনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গবেষণার যে ইতিবাচক ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে, তা ভবিষ্যতেও আরও গতিশীলভাবে এগিয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টারের কার্যক্রম ক্রমশ উন্নীত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো কোলাবরেটিভ রিসার্চে অর্থ বরাদ্দ একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এসব প্রকল্প শুধু গবেষণার মানই বাড়াবে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও দৃশ্যমান অবদানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী বলেন, আজকের দিনটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। সীমিত সম্পদের মধ্যেও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কোলাবরেটিভ রিসার্চে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এটি সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমি বিশ্বাস করি, এই গবেষণাগুলোর মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে, যা দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্টারের যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহবুব হোসেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. সফিকুল ইসলাম এবং অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক নিসাদ নাসরীন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রিসার্চ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন তুহিন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, শিক্ষক ও বরাদ্দপ্রাপ্ত গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে একই স্থানে ‘প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আসাদুজ্জামান। ‘রিসার্চ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে আলোচনা করেন প্রফেসর ড. মো. মাহবুব হোসেন এবং ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইন সিআরজিপি এন্ড আরজিপি’ বিষয়ে আলোচনা করেন প্রফেসর ড. খান মেহেদী হাসান। সমাপনী বক্তব্য দেন সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. কাজী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম।