ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজস্ব ও ব্যাংক খাতে চলমান সংস্কারকে স্বীকৃতি এবং তা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নতুন সরকারের প্রতি আগাম পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
চলমান ঋণ কর্মসূচির ৫ম পর্যালোচনা শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সফররত আইএমএফ পর্যালোচনা মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এ পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে নতুন সরকারকে রাজস্ব ও ব্যাংক খাত সংস্কারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগামী বছরের মে শেষে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমএফ। এর আগে সংস্থাটির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে নতুন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
গণ-অভ্যুত্থানের কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে- উল্লেখ করে আইএমএফ মিশন প্রধান বলেন, তবে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে। এটি এখনও বেশি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কষ্টকর। মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা না পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ ছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়াতে রাজস্ব আহরণের ওপর জোর দেন তিনি।
সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। যাতে সহজ, ন্যায্য ও কার্যকর রাজস্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধান করা যায়। এসব নীতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
ব্যাংক খাত নিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে মূলধন ঘাটতি, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, আইনি কাঠামোয় পুনর্গঠন এবং অর্থের উৎস নির্ধারণ করা থাকবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ মান পর্যালোচনা প্রয়োজন। ব্যাংক পরিচালনা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আইএমএফ’র ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মনোভাব ইতিবাচক
আইএমএফ’র ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মনোভাব ইতিবাচক বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আইএমএম মিশন প্রধান।
তিনি জনান, ঢাকায় অবস্থানকালে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে সংস্থার সংস্কার কর্মসূচি, দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, নির্বাচন ও ট্রানজিশন প্রক্রিয়া, দলগুলোর অগ্রাধিকার এবং তা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গত ৯ নভেম্বর এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ১২ নভেম্বর বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা আইএমএফ-এর ঋণ কর্মসূচি চালু রাখার বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন।