সাওপাওলো, ব্রাজিল থেকে: এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ৩০) আয়োজন করেছে ব্রাজিল। আসর বসেছে রাজধানী থেকে দূরের এক শহর বেলেমে। প্রধান শহর সাওপাওলো থেকে যার দূরত্ব ৩১৭০ কিলোমিটার।
১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন শেষ হবে আগামী ২৩ নভেম্বর। তবে এবার সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল বেশ ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। হয়েছেও তাই।
বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট থেকেই সমস্যার শুরু। ইমিগ্রেশন পুলিশের ভোগান্তি অনেককে হতাশ করেছে।
এর পরের মাথা ব্যাথার বিষয় ছিল মূল শহর থেকে বেলেমের দূরত্ব। বিমানে এর দূরত্ব কাছাকাছি হলেও সড়ক পথে সাওপাওলো থেকে ৩১৭০ কিলোমিটার। এত দূরের পথ যেতে সবারই কষ্ট হচ্ছিল। কারণ সবাইকে নামতে হচ্ছে সাওপাওলোতে। সাওপাওলো থেকে বাসে বেলেমে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা।
তবে বিমানে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা। গত অক্টোবরে এই রুটে টিকিটের দাম ছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এই ভোগান্তি যেন একেকজন যাত্রীর ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা তেরি হয়েছে। ফলে অনেক সাংবাদিককে সাওপাওলো থেকে ফেরত যেতে হবে। বিশেষ করে যারা আগে থেকে টিকিট কেটে আসতে পারেনি।
এরপর সাওপাওলোতে যে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি পোহাতে হচ্ছে তা হলো এখানকার ভাষা। এখানকার বাসিন্দারা প্রায় ৯৯ শতাংশ স্পেনিস বা পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলেন। এতো মানুষের মধ্যে একজনও ইংরেজি বলতে বা বুঝতে পারেন না। এক কথা কয়েকবার ভিন্নভাবে বলেও কোনো লাভ হয় না। কারণ তারা বোঝেন না। সাহায্য নিতে হয় ডিজিটাল মাধ্যমের।
এরপর আশেপাশে নেই কোনো খাবার হোটেল। যা আছে সবই ফাস্ট ফুডের আইটেম। এগুলো আবার হালাল হারামের পার্থক্য রয়েছে।
অন্যদিকে হোটেলে উঠেছি থ্রি স্টার মানের। এয়ারপোর্টের কাছে হোটেল ‘স্লিপ ইনে’। যার এক রাতের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এরপরেও খাওয়ার পানিটুকুও দেওয়া হয় না। জুতা, টিস্যু, পানি, চা কফি কিছুই নেই। অথচ কক্সবাজারের এক হাজারের হোটেলেও সবকিছু থাকে।
ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে প্রায় দুই ঘণ্টা। এত ধীরগতিতে কাজ চলে এখানে। তবে কোনো হইচই ছিল না। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে টেক্সি ক্যাবের বিরম্বনাও কম নয়। চালকরাও বুঝেন না ইংরেজি। পরে ব্রাজিলিয়ান ২০ রিয়ালের ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। মালামালা ও লোক বেশি হলে ছোট ট্যাক্সিগুলো নিতে চায় না। অথচ অল্প দূরত্ব। যাই হোক যে কথা বলতে চাচ্ছি, ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ চাইলেই এই সম্মেলনটা সাওপাওলো, রিও ডি জেনিরো কিংবা রাজধানী ব্রাসেলিয়াতে করতে পারতো। এই তিন বড় শহরেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। বেলেমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না থাকায় সবার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আবার বেলেমের টিকিটের দামও অনেক বেশি। দূরের এক শহরে কী কারণে এত বড় একটি আয়োজন করতে গেল ব্রাজিল তা জানার প্রশ্ন থেকেই যায়। ভোগান্তিতে পড়া অনেকেই জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাবে বলেও জানা গেছে।