দিল্লির লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এবার জড়িয়ে যাচ্ছে তুরস্কের নাম। তুরস্ক থেকে ‘উকাসা’ ছদ্মনামের এক ব্যক্তি এই হামলার নীলনকশা আঁকেন। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উমর উন নবির নেতৃত্বাধীন টিমকে দিতেন দিকনির্দেশনাও। এমনটিই বলছেন ভারতীয় তদন্ত কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, উকাসা ছিলেন দিল্লিভিত্তিক উমর নবির সন্ত্রাসী গ্রুপ নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের পাকিস্তানভিত্তিক পরিচালকদের মধ্যকার মূল সংযোগকারী।
কর্মকর্তারা জানান, এই ষড়যন্ত্রের বীজ রোপিত হয় ২০২২ সালে তুরস্কে। ওই সময় উমরসহ আরও তিনজন (যাঁরা দুটি পাকিস্তান-সমর্থিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত) তুরস্কে গিয়েছিলেনে।
উমর ২০২২ সালের মার্চ মাসে তুরস্কে যান এবং আঙ্কারায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন। এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কথাবার্তা প্রথমে টেলিগ্রামে শুরু হয়েছিল, পরে সিগন্যাল ও সেশনের মতো এনক্রিপটেড অ্যাপে পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উকাসাই তাঁদের গোপন সেল তৈরি ও ডিজিটাল ফাঁকি দেওয়ার কৌশল শেখান।
তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, উকাসাই এই সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করে দেন। পরিকল্পনায় একাধিক যানবাহনে বিস্ফোরক ভর্তি করে ধারাবাহিক হামলা চালানোর ছক আঁকা হয়।
অভিযানের জন্য তিনটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। একটি হুন্ডাই আই-২০, একটি লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্ট এবং একটি মারুতি ব্রেজা।
গত সোমবার (১০ নভেম্বর) লালকেল্লার কাছে উমরের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়, এতে ঘটনাস্থলেই উমর নিহত হন। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে ফরিদাবাদ থেকে ইকোস্পোর্টটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং ব্রেজা গাড়িটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কর্মকর্তাদের সন্দেহ, অবশিষ্ট গাড়িগুলোতেও বিস্ফোরক লুকানো থাকতে পারে।
সূত্রগুলো জানায়, উমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডা. মুজাম্মিল এ বছরের জানুয়ারিতে একাধিকবার লালকেল্লা পরিদর্শন করেছেন। তিনিও আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত।
এক তদন্তকারী বলেন, তাঁরা স্মৃতিস্তম্ভটির নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, যাতে ২০২৬ সালের ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় বড় হামলা চালানো যায়।
২০২২ সাল থেকে দলটি ৩৫০ কেজির বেশি বিস্ফোরক পদার্থ সংগ্রহ করেছিল, যার মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অল্প পরিমাণ আরডিএক্স ছিল। এই বিস্ফোরকগুলো এ বছরের শুরুর দিকে ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হয়, এর সূত্র ধরেই মুজাম্মিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই উমর পালিয়ে যান এবং দিল্লি-এনসিআরজুড়ে ১৬ ঘণ্টা ড্রাইভ করার পর বিস্ফোরকভর্তি আই-২০ গাড়িটির বিস্ফোরণ ঘটান।
তদন্তে আরও জানা গেছে, দিল্লির পাশাপাশি অযোধ্যাও তাঁদের লক্ষ্যবস্তু ছিল। এক সূত্র জানায়, তাঁরা ২৫ নভেম্বরের দিকে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন, যখন রামমন্দিরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের কথা ছিল।
উকাসার ডিজিটাল কর্মকাণ্ডের খুঁটিনাটি বের করতে ভারতীয় তদন্তকারীরা এখন বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাচ্ছেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী পরিচালকদের সঙ্গে তার যোগসূত্রতা বের করার চেষ্টা করছেন।
এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি এনক্রিপ্টেড চ্যাট ও বিদেশি অর্থ লেনদেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। তুরস্ক সংযোগই এই মামলার মূল কেন্দ্রবিন্দু।