চুয়াডাঙ্গা: জেলার জীবননগর সীমান্তে এক ‘কল্পিত স্বর্ণ ছিনতাই মামলা’ ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—একদল স্বর্ণ চোরাকারবারীর সঙ্গে যোগসাজশে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস একটি ভুয়া মামলা সাজিয়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে জেলে পাঠিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সীমান্ত বহু বছর ধরেই স্বর্ণ চোরাচালানের ‘রুট’ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই ‘ছিনতাই’ নাটক সাজিয়ে প্রকৃত চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়, আর নিরীহ মানুষ ফেঁসে যায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে জীবননগর উপজেলা শহরের মুক্তমঞ্চে ভুক্তভোগী পরিবারের নারী সদস্যরা মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছেন।
লিখিত বক্তব্যে নতুনপাড়া গ্রামের রাসেলের স্ত্রী তহমিনা বলেন, ‘গত ২ নভেম্বর গোয়ালপাড়া গ্রামে কথিত একটি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের কাহিনী বানানো হয়। অথচ সেটি থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় ৮ দিন পর, গত ১০ নভেম্বর। এই অযৌক্তিক বিলম্ব থেকেই বোঝা যায় মামলাটি সাজানো।’
মামলার বাদী ঢাকা তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দাবিদার আকিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তার কর্মচারী শাহাজামালের মাধ্যমে জীবননগরের এসবি জুয়েলার্সে স্বর্ণ পাঠানো হলে তা ছিনতাই হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী পক্ষ বলছে, “স্বর্ণ পাঠানোর কথা ছিল শহরের মোল্লা মার্কেটের দোকানে—যা ছিনতাইয়ের কথিত স্থান থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানে গিয়ে স্বর্ণবাহক শাহাজামাল কী করছিলেন?”
তাছাড়া বাদী মামলা করতে দেরি করেছেন ৮ দিন। স্থানীয়দের মতে, “এই সময়ের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজানো হয়েছে।”
অভিযোগ রয়েছে, মামলার সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে—তারা সকলেই একই পরিবারের সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
তহমিনা বলেন, “একই পরিবারের ৩জন কিভাবে একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন? এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় মামলাটি সাজানো।”
জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাসের নামও এসেছে এই বিতর্কে। অভিযোগকারীরা বলেন, “ওসি মামুন চোরাকারবারীদের সহায়তায় কল্পিত মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন। কেন তিনি যাচাই না করেই মামলা নিলেন, তা রহস্যজনক।”
তাদের দাবি, এই ছিনতাই নাটক মামলায় যারা এজাহারভুক্ত তারা সকলেই নির্দোষ। তাদের মোবাইল লোকেশন যাচাই করলেই উঠে আসবে চাঞ্চল্যকর মামলায় ফাঁসানোর তথ্য ! স্বর্ণের দাবিদার আকিদুল, এসবি জুয়েলার্সের মালিক সজিব, সাক্ষীগণ শাহাজামাল ও তার ছেলে মুরাদ এবং তার নাতী ছেলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন হোসেন বিশ্বাসের হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জার অথবা মোবাইল ফোন কল তালিকা তুলে যাচাই করলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত ছিনতাই রহস্য।
ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, মামলাটি নথিভুক্ত করতে ঢাকার এক অতিরিক্ত আইজিপি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারকে ফোন করেছিলেন—এমন দাবি করেছেন স্বয়ং ওসি মামুন হোসেন। এই বক্তব্য জনমনে নতুন প্রশ্ন তুলেছে—সত্যিই কি ওপর মহলের চাপে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল?
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, “আমরা নির্দোষ। প্রকৃত চোরাকারবারীরা বেঁচে গেছে, সাধারণ মানুষ বলির পাঁঠা হয়েছে। আমাদের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে লাগাতার আন্দোলন চলবে।” তারা আরও জানান, যদি সুষ্ঠু তদন্ত না হয়, তবে তারা আদালতের আশ্রয় নেবেন।
ভুয়া মামলা নথিভুক্ত করার বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এটার তদন্ত করা হবে। ভুয়া মামলা তদন্তের আগেই কিভাবে চাপিয়ে দেয় ও অভিযোগে শ্রমজীবী নিরীহ মানুষদের কেন আটক করা হলো – এমন প্রশ্ন করা হলে কোন জবাব দিতে পারেননি ওসি।