ইবি: জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের ৫১ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পুরস্কার বিতরণী ও শিশু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মনোবল সাহস আর হাতে রেখে হাত, নতুন স্বদেশে আনি আলোর প্রভাত স্লোগানকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ফুলকুঁড়ি আসর তারারমেলা শাখা।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গগন হরকরা গ্যালারিতে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ সময় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার ১৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন, মাইন্ড ম্যারাথন ও ফুটবল টুর্নামেন্টের বিজয়ী প্রতিযোগীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনটির শাখা পরিচালক খন্দকার আহনাফউজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ফুলকুঁড়ি আসরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক অগ্রপথিক মাহফুজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিন্নাতুল করিম, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম জাকির হোসেন ও অধ্যাপক ড. এরশাদ উল্লাহ, আইআইইআর এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এসময় সংগঠনটির সহকারী পরিচালক মুবাশ্বির আলমসহ ১৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, সংগঠনটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার ১৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন, মাইন্ড ম্যারাথন ও ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সেরাদের সেরা ও বর্ষসেরা কুঁড়িদের পুরস্কৃত করা হয়। এতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বিজয়ী পুরস্কার, ৭ জন সেরাদের সেরা ও একজন বর্ষসেরা কুঁড়ির পুরস্কার লাভ করেন। অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে অভিভাবকরা অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, শিশুদের নিয়ে এ ধরনের সংগঠন আছে বলেই বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করতে পারি। ফুলকুঁড়ি ভালো, নৈতিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে যে ভূমিকা রাখছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সকলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে সংগঠনটির পরিচালক খন্দকার আহনাফউজ্জামান বলেন, নিরলস পথচলার ৫০টি ফাল্গুন অতিক্রম করে শিশুদের প্রিয় এই সংগঠনটি আজ পৌঁছে গেছে ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আসরের কুঁড়ি ও সংগঠকগন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীব্যাপী। পৃথিবীকে গড়ার দীপ্ত শপথে বলীয়ান এ ফুলগুলোর সুবাসে সুবাসিত হচ্ছে ধরণি। মেলে ধরেছে তারা শান্তি, সৌন্দর্য আর সম্প্রীতির সামিয়ানা।
প্রধান আলোচক মাহফুজুর রহমান বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ফুলকুঁড়ি আসর শিশুদের অ্যাকাডেমিক মান নৈতিক, সাংস্কৃতিক মান বিকাশে সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। বাবা-মা, শিক্ষকদের আদেশ উপদেশ মানতে হবে। সময়নিষ্ঠ হতে হবে। স্মার্ট ডিভাইসকে স্মার্টলি ব্যবহার করা শিখতে হবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিশুর মনন বিকাশে অভিভাবকের আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কীভাবে শিশুকে ডিল করছেন তা শিশু বিকাশে প্রভাব ফেলে। শিশুদেরকে পরিমিত সময় দিতে হবে। কোথায়, কীভাবে ব্যয় করছে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের লাইনচ্যুত হওয়ার অনেক পথ খোলা। তাই ছেলে-মেয়েকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সে কার সাথে চলাফেরা করে তা নজরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ফুলকুঁড়ি আসর একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান দাবি করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ফুলকুঁড়ি ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশু কিশোরদের নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর দেশ গঠনে ফুলকুঁড়ি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
উল্লেখ্য, ‘পৃথিবীকে গড়তে হলে, সবার আগে নিজকে গড়ো’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর ১৯৭৪ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বরে একতা, শিক্ষা, চরিত্র, স্বাস্থ্য ও সেবা এই পাঁচটি আদর্শকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ফুলকুড়ি শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশ, দক্ষতা অর্জন ও চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।