Saturday 15 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ বছর ধরে থমকে থানচির পানি প্রকল্প, দুর্ভোগে হাজারো পাহাড়ি

মোহাম্মদ ইসহাক ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০০

থানচি উপজেলা পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প। ছবি: সারাবাংলা

বান্দরবান: জেলার দুর্গম থানচি উপজেলা। পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতি, চারদিকের ঝিরি-ঝরনা—সব মিলিয়ে অপার সৌন্দর্যের এলাকা। কিন্তু এই সৌন্দর্যের অন্তরালে বাসিন্দাদের জীবনে লুকিয়ে আছে তীব্র পানিসঙ্কটের দীর্ঘ ছায়া। ভূমি জটিলতা আর প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে প্রায় চার বছর ধরে থমকে থাকা উপজেলা পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প আজও চালু হয়নি। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে আছে কয়েক হাজার পাহাড়ি মানুষ।

জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থানচি সদর এলাকায় ৩৭ শতক জমিতে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। মি. ইউটি মং প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে আবুল কালাম সেন্টু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা চিংথোয়াই মারমা ‘পার্টনার’ হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন শুরু করলেও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

নির্ধারিত সময় বহু আগেই পেরিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, তদারকির অভাব ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বহীনতা মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি থমকে আছে একই জায়গায়। অথচ বাস্তবে এই প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানি পাবে।

এদিকে প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় স্থানীয় লোকজন অনেকটা বাধ্য হয়ে ঝিরি, পাহাড়ি ঝরনা ও কূপের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পানি পান করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। তাই পানির সংকট নিরসন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে দ্রুত পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু করার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

আধুনিক পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প

আধুনিক পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প

টিএন্ডটি পাড়ার বাসিন্দা রেহেনা আকতার বলেন— ‘ঝিরির পানি আনতে অনেক দূরে যেতে হয়, তাও আবার পরিষ্কার নয়। রমজানে পানি না থাকায় অজু পর্যন্ত করতে পারি না। শুনেছি কোটি টাকা ব্যয়ে পানি প্রকল্প বানানো হয়েছে, কিন্তু আমরা কবে পানি পাবো—তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

তার পাশে দাঁড়ানো মো. ইউসুফের আক্ষেপ— ‘বছর আসে, বছর যায়; কিন্তু পানি প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। শুধু কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ে, কিন্তু পানি নেই জীবনে।’

অন্যদিকে স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, প্রতিবছর পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য জনস্বাস্থ্য অধিদফতর কোটি টাকার পানি প্রকল্প নিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজের মান নড়বড়ে। নিয়ম না মেনে কাজ, দরপত্রে অনিয়ম, নজরদারির অভাব—সব মিলিয়ে অধিকাংশ প্রকল্প শুকনো মৌসুম আসার আগেই অকেজো হয়ে পড়ে। দুর্গম এলাকায় স্থাপিত টিউব ওয়েল, রিংওয়েল ও জিএফএসসহ নানা পানি সরবরাহ প্রকল্প গুলো বছরের একটি সময় পর কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এজন্য শুষ্ক মৌসুমে ঝিরি-ঝরনার পানি শুকিয়ে গেলে দুর্গম এলাকায় দেখা দেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্পটি চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা নিরসন হলে দ্রুত সময়ে প্রকল্পটি চালু করা হবে।’

উল্লেখ্য, পানি সরবরাহ স্যানিটেশন প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন থানচি সদরের ১ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানি পাবে এবং এর মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় লাঘব হবে দীর্ঘদিনের পানির সমস্যা।

বিজ্ঞাপন

আরো

মোহাম্মদ ইসহাক - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর