Saturday 15 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুঞ্জিভূত ঋণ সাড়ে ২১ লাখ কোটি টাকা
অন্তর্বর্তীর এক বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি

সোহেল রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৪ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৩

-ছবি : প্রতীকী

ঢাকা: প্রতিবছর নিয়মিত দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হলেও বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ বাড়ছেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত এক বছরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। জিডিপি’র হিসাবে বেড়েছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বা চলতি পঞ্জিকা বছরের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত (অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি) ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এটি ছিল জিডিপি’র ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

অতি সম্প্রতি এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ হিসাব মতে, সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের ৫৬ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ এবং অবশিষ্ট ৪৪ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের এ বিভাজন দেশীয় ঋণের উপর সরকারের টেকসই নির্ভরতার ইঙ্গিত দেয় এবং বৈদেশিক ঋণের ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা সরকারের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ- বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) তুলনায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের স্থিতি বেড়েছে। গত জুন শেষে এর পুঞ্জিভূত স্থিতি দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড ও স্পেশাল ট্রেজারি বন্ড থেকে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ কোটি টাকা); ট্রেজারি বিল থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা); বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৫৭ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ৫৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) ও ‘সুকুক’ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে গৃহীত পুঞ্জিভূত ঋণ স্থিতি সামান্য কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ কমেছে এবং অন্যান্য উৎস (জিপিএফ) থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাতে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা) এবং অন্যান্য উৎস (জিপিএফ) খাতে পুঞ্জিভূত ঋণ ৮৪ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ৭৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা)।

সার্বভৌম ব্যাংক গ্যারান্টি

অর্থ বিভাগ বলছে, সরকারের এ পুঞ্জিভূত ঋণ হিসাবের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের দেশি-বিদেশি গৃহীত ঋণের বিপরীতে সরকার প্রদত্ত সার্বভৌম গ্যারান্টি বা দায় রয়েছে। গত জুন শেষে এ ধরনের গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির পরিমাণ ৬৭ হাজার ৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। গত ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের গ্যারান্টির স্থিতি ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা।

বৈদেশিক ঋণের হিসাবে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার গরমিল 

সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে বিগত সরকারের আমলের মত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও বড় ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান। এর পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার অধিক (প্রায় ১ হাজার ৪৫৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার)।

অর্থ বিভাগ-এর হিসাব অনুযায়ী, গত জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৯ হাজার ১৮১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর হিসাব মতে, গত জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ২৩৭ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখ ২৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এটি অর্থ বিভাগ-এর পরিসংখ্যানের তুলনায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত জুন শেষে দেশে পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দঁড়িয়েছে জিডিপি’র ২০ শতাংশ (অর্থ বিভাগের হিসাবে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ)। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। জিডিপি’র হিসাবে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪৮ দশমিক ৮৭ ডলার। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০৪ দশমিক ৮৭ ডলার।

অর্থ বিভাগ-এর মতে, সরকারের ঋণ বাড়লেও এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নীচে রয়েছে। বৈদেশিক ও সামগ্রিক ঋণ ঝুঁকির ক্ষেত্রে ‘নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে। তবে ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখনো সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ-রফতানি অনুপাত ১৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রফতানির তুলনায় এর মূলধন ও সুদ পরিশোধের চাপ আগামী দিনে বৈদেশিক ঋণের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর