রাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, ‘জুলাইবিপ্লবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল জনগোষ্ঠীরা সেসময় সকল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে ৩০ জুলাই সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার রাবির ভাইয়েরা সেদিন সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নামার পরেই দেশের সকলে রাস্তায় নেমেছিল।’
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের আয়োজিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাইবিপ্লবে রাজশাহী মহানগরের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আলী রায়হান ভাইও শহীদ হয়েছিল। এই ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহীর সমগ্র মানুষের অগ্রনী ভুমিকা আমরা দেখেছি। বিগত ফ্যাসিবাদি আমলে খুনি হাসিনা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তার দোসররা বাংলাদেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসে একটি কনসেনট্রেট ক্যাম্প তৈরি করেছিল। গণরুম-গেস্টরুম কালচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারকে তারা ক্ষুণ্ন করেছিল। সেই আমলে ক্যাম্পাসগুলোতে কেউ ইসলাম চর্চা করতে পারত না, কেউ যদি ইসলাম চর্চা করত, নামাজ পড়ত, আল্লাহ-রাসুলের কথা বলত, তখন তাকে বিভিন্নভাবে ট্যাগিং করা হতো। আজকে এই জুলাইবিপ্লবের মাধ্যমে এবং অসংখ্য ভাই-বোনের সেক্রিফাইসের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও আমাদের মুক্তি আসেনি।’
জুলাইবিপ্লব ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ভুলে যাচ্ছি, ছাত্রসংগঠনগুলোতে দেখা দিচ্ছে দাম্ভিকতা—তাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখার আহ্বান জানাই। রাজনৈতিক দলগুলো আজ ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছে এবং তাদের দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে; তাই আমরা বলতে চাই আপনারা খুনি হাসিনা ও তার দোসরের মতো ভুল করবেন না। ইসলামী ছাত্রশিবির আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না—বাংলাদেশের কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমরা জুলাইয়ে যেমন রাস্তায় নেমেছি, আবারও ঠিক একইভাবে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। মানুষের আজাদীর লড়াই ইসলামী ছাত্রশিবির কিয়ামত পর্যন্ত চালিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই—খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে, আর ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেখানে পাওয়া যাবে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে, কারণ তারা রাজনৈতিক দল নয়—তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।’
নবীনবরণ অনুষ্ঠানে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘‘১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।’’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি—এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করেছি। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে আমরা আমাদের বোনদের রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা তা করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।’
নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অনুভুতি প্রকাশ করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম ফাহিম বলেন, ‘এরকম নবীনবরণ আমরা আর কোনো সংগঠনের কাছ থেকে পাইনি। আমাদের বলা হতো শিবির নারী বিদ্বেষী, শিবির রগ কাটে। কিন্তু বাস্তবতার কথা হলো আমরা তাদের যত কাছাকাছি যেতে পেরেছি তত তাদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং তাদের মতাদর্শ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা চাই আজকের এই ক্যারিয়ার গাইডলাইনের ধারা যেন অব্যহতি থাকে এবং শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যায় তারা যেন সবসময় তৎপর থাকেন।’
উল্লেখ্য, রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে নবীনবরণ হলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে এটি প্রায় সাড়ে চার দশক পর প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ও চাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম এবং ইব্রাহিম হোসেন রনি। প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।