সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে দুই থানায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের ১৭৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে নাশকতার মামলা হয়েছে। এই দুই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সদর থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান এবং শান্তিগঞ্জ থানায় এসআই সেলিম এই মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সুনামগঞ্জ পৌর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বখতিয়ারুল হক মাহি (২৩), জেলা শাখার সহ সভাপতি নিহার রঞ্জন (৪০) ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম চৌধুরী। অন্যজন হলেন পুরান লক্ষণশ্রীর মিনা দাশ।
সদর থানার মামলায় সাবেক পৌর মেয়র নাদের বখ্ত, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- বখতিয়ারুল হক মাহি, নিহার রঞ্জন, মিনা দাশ, ফুয়াদ আহম্মেদ, শাহরিয়ার নুর নিহান, মেহেদী হাসান সাকিব, ফাহিম আহমেদ, মাহমুদুল হাসান পলাশ, আলী হোসেন, শিহাব নুর, মো. শাহারুল আলম, রিমন, বিশাল, তারেক, তাফসির, পলাশ, ইফতি বখ্ত, আশরাফুল ইসলাম রাহাত, শাহরিয়ার আহমদ সাগর, আসেফ বখ্ত রাদ, আশিকুর রহমান রিপন, হারুনুর রশিদ হারুন, মাসাকাওয়াত জামান ইনতি, মো. রাহাত আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদ শিহাব, ইমন, আলী হোসেন, রিংকু চৌধুরী, সানোয়ার, আবুল হাসনাত মো কাওছার, বাবু, আফজাল ও রুহেল।
অন্যদিকে শান্তিগঞ্জ থানায় পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা এমএ কাশেম চৌধুরী, আতাউল হক সানী, রিফাত উদ্দিন ও হাবিব আহমদসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৪৫ জনকে আসামি করে নাশকতার মামলা হয়েছে।
জানা যায়, গত বুধবার দিনে গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে ২০-২৫ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা একমাত্র নারী ছিলেন মিনা দাশ। মিছিল শেষে পরে ঢাকা পালানোর সময় বাস কাউন্টার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যদিকে বুধবার রাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব পাগলা এলাকায় অবস্থান নিয়ে গাড়ির টায়ার ও মশালে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মী। ধারণা করা হয়, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন ছিলেন। ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাশেম নাইম জানান, ওই দিন পাগলা বাজারে আমাদের দলীয় কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে। দামোধরতপী-মাহমুদপুরে আমাদের কর্মী মিয়া সাইফুল, ইজাদসহ আরও অনেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তারা মিছিলকারীর অবস্থান টের পেয়ে আমাদের অবগত করেন। আমরা দুই দিক থেকে ধাওয়া দেই। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে সিএনজি যোগে নাশকতাকারীরা পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা তারা সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল। আমাদের এলাকার কারও যোগসাজশ অবশ্যই আছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। তারা জ্বালাও-পোড়াও করলে কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা তাদের প্রতিহত করব। কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকলে আমরা রাজপথ পাহারা দিতেও প্রস্তুত আছি।
এদিকে, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ শহরতলির ইকবাল নগর, লালপুর ও আব্দুজ জহুর সেতুর শেষাংশে মিছিল করতে চেয়েছিল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। পরে দলের নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুলের নেতৃত্বে তিনটি স্থানেই বিএনপি নেতা কর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা পালিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন বলেন, ‘১৭ নভেম্বর সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে পুলিশের সতর্ক অবস্থান রয়েছে। নাশকতার মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।’