ঢাকা: পরিচালনা পর্ষদে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান-এর পদ বহাল রাখার কারণে স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন করেনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর (ট্রেক-১৭৮ সনদের মেয়াদ ছিল চলতি বছর ৮ জুন পর্যন্ত। মূলত মালিকানায় সালমান এফ রহমান-এর থাকার কারণেই সনদ নবায়ন করা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যেই তাকে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক চিঠি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেস (ডিএসই) পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ রয়েছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে। এ কারণে চলতি বছরের গত ৩০ জুন যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে বিএসইসি সালমান এফ রহমান-কে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সালমান এফ রহমান পুঁজিাবজারে নিষিদ্ধ থাকায় বেক্সিমকো সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমানে শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সালমান এফ রহমান-কে আটক করা হয়। হত্যা মামলায় বিচার চলমান থাকায় তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। কিন্তু সনদ নবায়নের জন্য করা আবেদনে আইনজীবীর মাধ্যমে তার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি, যা বেআইনি হওয়ায় আবেদন বাতিল করে দেয় বিএসইসি।
এদিকে, সনদ নবায়ন না হওয়ায় শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারছেন না বিনিয়োগকারী। অনেকটা অলস সময় পারছে করছেন কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন দেশের বাইরে।
সালমান এফ রহমান-কে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবসা করার সুয়োগ রয়েছে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ-এর। কিন্তু তাকে সরাতে কোম্পানিটি গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেখানে সার্বিক বিষয় তুলে ধরে আদালতে আবেদন করলে অনেক আগেই সমাধান হয়ে যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএসইসি’র চিঠিতে বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি(৮) অনুসারে অননুমোদিত (নন-কমপ্লায়েন্স) থাকার কারণে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর পক্ষে স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন করতে পারে না। সেই সঙ্গে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএসইসি সালমান এফ রহমানকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তিনি সিকিউরিটিজ বাজার-সম্পর্কিত যে কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। উল্লিখিত আদেশের প্রেক্ষিতে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ-এর পক্ষে স্টক-ব্রোকার ও স্টক-ডিলার নিবন্ধন সনদ নবায়ন করতে পারে না বিএসইসি।
স্টক ডিলার ব্রোকার আইনে বলা আছে, সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। এই সময়ে আবেদন না করলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানটি এই আইন ভঙ্গ করে ৯৪ দিন পর আবেদন করে। এতে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানার মুখে পড়েছে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ।
কোম্পানির তথ্য বলছে, বেক্সিমকো সিকিউরিটিজের পরিচালন পর্ষদে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হলো-বেক্সিমকো হোল্ডিংস এবং এসএস এক্সপোর্টস। এর মধ্যে সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো হোল্ডিংসের ও ওসমান কায়সার চৌধুরী এসএস এক্সপোর্টসের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে। কিন্তু সালমান এফ রহমান কারাগারে থাকায় বোর্ড সভা করতে পারছে না কোম্পানিটি। এই কারণ দেখিয়ে কোম্পানিটি এখনও তাকে পরিচালক হিসেবে রেখে দিয়েছে। তবে আদালতে সবকিছু উপস্থাপন করলে সমস্যা আরো আগে সমাধান হয়ে যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সালমান এফ রহমান-কে পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবসা করার সুয়োগ রয়েছে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ-এর। কিন্তু তাকে সরাতে কোম্পানিটি গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেখানে সার্বিক বিষয় তুলে ধরে আদালতে আবেদন করলে অনেক আগেই সমাধান হয়ে যেত।
এ বিষয়ে জানতে বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তফা জামানুল বাহার-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।